নিষিদ্ধ উৎস থেকে তহবিল পেয়েছে ইমরানের দল, কারণ দর্শানোর নোটিশ

ফাইল ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের বিরোধী দল পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ) নিষিদ্ধ ঘোষিত উৎস থেকে তহবিল পেয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)। কেন এসব অর্থ জব্দ করা হবে না—দলটিকে তার কারণ ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দিয়ে কমিশন রুল জারি করেছে। খবর ডনের।

পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আকবর এস. বাবরের করা এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতানা রাজা আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন। ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর দায়ের করা মামলাটি এত দিন ঝুলে ছিল। গত ২১ জুনের শুনানি শেষে মামলার রায়ের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করা হয়। আজ সকাল ১০টায় রায় ঘোষণার কথা থাকলেও তা শুরু হতে আধঘণ্টা দেরি হয়।
রুলে যা বলা হয়েছে:

নিষিদ্ধ উৎস থেকে পিটিআই তহবিল পেয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ধনকুবের আরিফ নাকভি এবং আরও ৩৪ জন বিদেশি নাগরিকের কাছ থেকে তহবিল পায় দলটি। পিটিআই আটটি অ্যাকাউন্টের মালিকানা নিয়েছে এবং ১৩টি অ্যাকাউন্ট গোপন রেখেছে।

পিটিআই নিষিদ্ধ উৎস থেকে যে তহবিল পেয়েছে, তা কেন জব্দ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে পিটিআইকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসিপি।
রুলে আরও বলা হয়েছে, পিটিআইপ্রধান ইমরান খান কমিশনের কাছে একটি ‘ভুল ঘোষণা’ জমা দিয়েছেন। পিটিআই চেয়ারম্যান অ্যাকাউন্টগুলো গোপন রেখেছেন, যা সংবিধানের লঙ্ঘন।

রায় ঘোষণার পর সাংবাদিকদের পিটিআইয়ের নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, বেশির ভাগ অর্থ প্রবাসী পাকিস্তানিদের কাছ থেকে এসেছে। তিনি বলেন, ‘পিএমএল-এন, জেইউআই এবং পিপিপি কেন প্রবাসী পাকিস্তানিদের শত্রু ঘোষণা করছে, তা আমি বুঝতে পারছি না।

আমরা প্রবাসী পাকিস্তানিদের দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলে বিবেচনা করি এবং আমরা আমাদের তহবিলের জন্য তাঁদের ওপর নির্ভর করে যাব।’ মামলার ব্যাপারে এ পিটিআই নেতা বলেন, এটি কখনো ‘বিদেশি তহবিল’ সংক্রান্ত মামলা ছিল না। ইসিপির সিদ্ধান্তেই তার প্রমাণ মিলেছে। পিটিআই নেতা আরও বলেন, যে অ্যাকাউন্টগুলোর মালিকানা ঘোষণা করা হয়নি, তার সঙ্গে পিটিআইপ্রধানের সরাসরি সংযোগ নেই।

সব রাজনৈতিক দলের তহবিলের উৎস সম্পর্কে জানার অধিকার জনগণের রয়েছে উল্লেখ করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, পিটিআইসহ কোনো দলেরই জনগণের কাছ থেকে তহবিলের উৎস সম্পর্কিত তথ্য গোপনের অধিকার নেই। আপনারা পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে করা মামলার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এখন আমাদের প্রত্যাশা, আপনি অন্য দলগুলোর তহবিলের উৎস সম্পর্কিত তথ্যও সামনে নিয়ে আসবেন।
আজ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইসলামাবাদের রেড জোন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।

নিষিদ্ধ তহবিল–সংক্রান্ত মামলা

নিষিদ্ধ তহবিল–সংক্রান্ত মামলাটিকে আগে বিদেশি তহবিল–সংক্রান্ত মামলা বলে উল্লেখ করা হতো। ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আকবর এস. বাবর মামলাটি করেন। বর্তমানে পিটিআইয়ের এখন আর সংশ্লিষ্টতা নেই বাবরের। মামলায় তিনি অভিযোগ করেছিলেন, পাকিস্তান ও বিদেশ থেকে পিটিআই যে তহবিল পায় তাতে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম আছে।

অবশ্য পিটিআই কোনো ধরনের অপকর্মের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি নিষিদ্ধ উৎস থেকে দলের তহবিল আসে না। পিটিআইর তহবিলের উৎস খতিয়ে দেখতে ২০১৮ সালের মার্চে একটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় চার বছর পর গত ৪ জানুয়ারি কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়, জ্ঞাত-অজ্ঞাত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক ও কোম্পানি থেকে তহবিল পাচ্ছে পিটিআই।

নতুন বিক্ষোভের ডাক ইমরানের

এদিকে ৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ইসলামাবাদে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের সামনে নতুন বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন পিটিআই নেতা ইমরান খান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতানা রাজার পদত্যাগ চেয়ে এ বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।