সিঙ্গাপুরে গ্রেপ্তার ১০ অর্থ পাচারকারী কারা

অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের পাসপোর্ট জব্দ করে সিঙ্গাপুর পুলিশ
ছবি: সিঙ্গাপুর পুলিশের সৌজন্যে

বিদেশ থেকে পাচার করে আনা প্রায় ১০০ কোটি সিঙ্গাপুরি ডলারের অর্থসম্পদ জব্দ করেছে সিঙ্গাপুর পুলিশ। মানি লন্ডারিং ও জালিয়াতির মাধ্যমে এসব অর্থসম্পদ সে দেশে আনায় তুরস্ক, চীন, সাইপ্রাস ও কম্বোডিয়াসহ কয়েকটি দেশের ১০ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স (এসপিএফ) অভিযান চালিয়ে অর্থসম্পদসহ তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

সিঙ্গাপুরের সান্তোসা কোভ, ট্যাংলিন, অরচার্ড, হল্যান্ড ও রিভার ভ্যালিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এই বিদেশি ১০ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব এলাকার বিভিন্ন বিলাসবহুল বাংলো, ফ্ল্যাট ও অভিজাত বাড়িতে বসবাস করতেন তাঁরা।

সিঙ্গাপুর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের চার শতাধিক সদস্য অভিযানে অংশ নেন। এতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ, বাণিজ্যবিষয়ক বিভাগ (সিএডি), দাঙ্গা পুলিশ, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা যুক্ত ছিলেন। বলা হচ্ছে, দেশটির ইতিহাসে মানি লন্ডারিংবিরোধী সবচেয়ে বড় অভিযানগুলোর একটি এটি।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানায় সিঙ্গাপুর পুলিশ। এতে বলা হয়, অভিযানে ৯ জন পুরুষ ও ১ জন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বয়স আনুমানিক ৩১ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। মানি লন্ডারিং, জালিয়াতি ও গ্রেপ্তারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ গ্রেপ্তার করা হয় তাঁদের।

অভিযানের সময় বিপুল পরিমাণ সিঙ্গাপুরের ডলার উদ্ধার করে পুলিশ
ছবি: সিঙ্গাপুর পুলিশের সৌজন্যে

গ্রেপ্তার এড়াতে ৪০ বছর বয়সী সাইপ্রাসের নাগরিক সু হেইজিন তিনতলার বারান্দা থেকে লাফ দেন। এরপর নালার ভেতর লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করেন তিনি। গ্রেপ্তার ১০ ব্যক্তি ছাড়াও আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় আটজন সন্দেহভাজন পলাতক রয়েছেন। তাঁদের নাম পুলিশের তালিকায় রাখা হয়েছে।

পুলিশের অভিযানে গাড়ি, ব্যাংক হিসাব, নগদ অর্থ ও বিভিন্ন দামি জিনিসপত্র জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ১০০ কোটি সিঙ্গাপুরি ডলার।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা যেসব দেশের নাগরিক

সাইপ্রাসের নাগরিক সু হাইজিন (৪০) থাকতেন হল্যান্ড এলাকার এওয়ার্ট পার্কের একটি বিলাসবহুল বাংলোতে। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ট্যাংলিন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন তুরস্কের নাগরিক ভ্যাং শুইমিং (৪২)। তিনিও ওই এলাকার বিলাসবহুল বাংলোতে থাকতেন। তাঁর বিরুদ্ধে কাগজপত্র জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

গ্রেপ্তার চীনা নাগরিক ঝাং রুইজিন (৪৪) ও লিন বাওয়েয়িং (৪৩)। সান্তোস কোভের পার্ল দ্বীপের একটি বাংলো থেকে গ্রেপ্তার হন তাঁরা। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

কম্বোডিয়ার নাগরিক সু বাওলিনকে (৪১) নাসিম রোডের একটি বাংলো থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জাল কাগজপত্র ব্যবহার করায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অন্যদিকে ভানুয়াতুর নাগরিক ৩৫ বছর বয়সী সু জিয়ানফেং গ্রেপ্তার হয়েছেন বুকিত তিমাহ এলাকার একটি বিলাসবহুল বাংলো থেকে। তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

রিভার ভ্যালি এলাকার লিওনি হিল রোডের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কম্বোডিয়ার নাগরিক চেন কুইনজিগুয়ানকে (৩৩)। তাঁর বিরুদ্ধেও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অরচার্ড এলাকার পেটারসনের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে ওয়াং দেহাই (৩৪) নামের সাইপ্রাসের এক নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ওয়াং বাউসেন (৩১) নামের আরেক চীনা নাগরিককে ট্যাংলিন এলাকার একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধেও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ পুলিশের।

বিভিন্ন বিলাসবহুল সামগ্রী জব্দ করা হয়
ছবি: সিঙ্গাপুর পুলিশের সৌজন্যে

কম্বোডিয়ার নাগরিক সু ওয়েনকিয়াং (৩১) গ্রেপ্তার হয়েছেন বুকিত তিমাহ এলাকার একটি বাংলো থেকে। তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ১০ ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এসপিএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব বিদেশির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে, তাঁরা নিজ দেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেই সঙ্গে তাঁরা অনলাইন জুয়া খেলার সঙ্গেও জড়িত। সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিবেদন (এসটিআর) হাতে পেয়ে বিশদ অনুসন্ধানের পরই পুলিশ তাঁদের শনাক্ত করেছে।

সিঙ্গাপুরের পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবারের অভিযানে ৯৪টি জমি-বাড়ি এবং ৫০টি গাড়ির নামে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর অর্থ হলো মালিকেরা এসব জমি ও গাড়ি বিক্রি করতে পারবেন না। এসব জমি-বাড়ি ও গাড়ির মোট মূল্য ৮১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ মদের বোতল জব্দ করা হয়েছে।

অভিযানে ৩৫টির বেশি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে পুলিশ। এসব হিসাবে ১১ কোটি ডলারের বেশি অর্থ জমা রয়েছে। এ ছাড়া জব্দের তালিকায় রয়েছে অনলাইনে সম্পদ থাকার ১১টি নথি, ২টি সোনার বার, ২৫০টির বেশি দামি ব্যাগ ও ঘড়ি, ১২০টির বেশি মুঠোফোন ও কম্পিউটার, ২৭০টির বেশি দামি অলংকার।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযানে জব্দ করা অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ৩০ লাখ ডলারের বেশি।