সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি শ্রমিক ক্ষতিপূরণ পেলেন ১০ কোটি টাকা

বাংলাদেশি জানায়েদ (ডানে) ২০১৮ সালের ওই ঘটনার পর আর চলাফেরা করতে পারেন না। পাশে তাঁর ভাই জাহিদ
ছবি: টুইটার

চার বছর আগের কথা। বাংলাদেশি শ্রমিক জানায়েদ সিঙ্গাপুরে ওয়েস্ট গেট টাওয়ার নামের একটি ভবনে কাজ করার সময় ৩ দশমিক ৭ মিটার (১২ ফুট) ওপর থেকে পড়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে মামলা করেন জানায়েদ। চার বছরের বেশি সময় পর সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে ওয়েস্ট গেট টাওয়ারের ভর্তুকি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এমসিএসটি) জানায়েদকে ৯ লাখ ৭১ হাজার ডলার (১০ কোটি ২৩ লাখ টাকা) ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।

জানায়েদের বয়স এখন ৪৭ বছর। ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর জুরং ইস্ট এলাকায় অফিস টাওয়ারের যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক কক্ষে একটি চিলার পরীক্ষা করার সময় তিনি পড়ে যান। এতে মেরুদণ্ডে তিনি এতটাই আঘাত পান যে চলাচল করতে পারেন না।

এ বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরে নিউটেক ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় বিমা না করায় এবং তাঁর চিকিৎসার খরচ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়।

দুর্ঘটনার পর জানায়েদ সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল এবং আলেক্সান্দ্রা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ৯১ দিন এবং আলেক্সান্দ্রা হাসপাতালে ১৫২ দিন ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে আদালতের এক রায়ে বলা হয়, ক্ষতিপূরণ বাবদ জানায়েদ যে অর্থ পাচ্ছেন, তার মধ্য থেকে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের বিল বাবদ ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৮১ ডলার (১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা) এবং আলেক্সান্দ্রা হাসপাতালের বিল বাবদ ৫৮ হাজার ৮১ ডলার (৬১ লাখ ২৩ হাজার টাকা) পরিশোধ করতে হবে।

আইনি প্রতিষ্ঠান হোহ ল কর্পসের আইনজীবী এন শ্রীনিবাসনের সহায়তায় জানায়েদ সিঙ্গাপুরের হাইকোর্টে চারটি পক্ষকে বিবাদী করে মামলা করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনেন তিনি। ওই চার পক্ষ হচ্ছে—নিউটেক ইঞ্জিনিয়ারিং; জানায়েদের নিয়োগকর্তা এবং এসটিএ রিটা ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেসের মালিক ফেলিজার্দো পারস জোস, ওয়েস্ট গেট টাওয়ারের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত এমসিএসটি এবং অফিস ভবনে শীতাতপনিয়ন্ত্রণের প্রধান ঠিকাদার জো ইন্টারন্যাশনাল।

ওয়েস্ট গেট টাওয়ারের চিলার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এসটিএ রিটা ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস জানায়েদকে সেখানে পাঠিয়েছিল।

স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মই ব্যবহার করে চিলারের ওপর উঠেছিলেন জানায়েদ।

চিলারের ওপর দাঁড়িয়ে জানায়েদ এক হাতে তাঁর ফোন ধরে রেখেছিলেন এবং অন্য হাত দিয়ে জুম ইন করে খুব কাছ থেকে একটি সুইচের ছবি তুলছিলেন।

চিলারের ওপরে কোনো সুরক্ষা বেষ্টনী ছিল না। জানায়েদও কোনো ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা কিংবা বেল্ট ব্যবহার করেননি।

এসটিএ রিটা ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেসের কাজগুলো সাব–কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে জোয়ে ইন্টারন্যাশনাল করে থাকে।

জানায়েদ ওই দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার জন্য বিবাদী পক্ষগুলোর ৭০ শতাংশ দায় পেয়েছেন আদালত। বাকি ৩০ শতাংশ দায় জানায়েদকে দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালের আগস্টে সিঙ্গাপুরের হাইকোর্ট এ রায় দেন।

সাব–কন্ট্রাক্টর প্রতিষ্ঠান এসটিএ রিটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি আদালত এমসিএসটিকেও ৭০ শতাংশ দায় দেওয়ায় ওয়েস্ট গেট টাওয়ারের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আপিল করেছিল। তবে ২০২২ সালের জুনে এমসিএসটির করা আপিল আবেদন সিঙ্গাপুরের আপিল আদালতে খারিজ হয়ে যায়।

জানায়েদকে যে ৩০ শতাংশ দায় দেওয়া হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে তিনিও আপিল করেছিলেন। তবে তাঁর সে আবেদনও খারিজ হয়ে যায়।

এদিকে সিঙ্গাপুরে জানায়েদের ভাই জাহিদের (৪৩) দায়ের করা পৃথক আরেকটি মামলার কার্যক্রমও চলছে।

জাহিদও বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন। তিনি ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল ইউনাইটেড স্কয়ার মলে স্টারবাকসের একটি শাখায় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার সময় ৩ মিটার ওপর থেকে পড়ে পায়ে আঘাত পান।

২০১৯ সালের অক্টোবরে মামলাটি করেন জাহিদ। তাঁর পক্ষেও লড়ছেন আইনজীবী শ্রীনিবাসন। জাহিদ মামলা করেছেন এসটিএ রিটা ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেসের মালিক ফেলিজার্দো পারস জোস, জো ইন্টারন্যাশনাল, স্টারবাকস কফি সিঙ্গাপুর ও ইউওএল প্রপার্টি ইনভেস্টমেন্টের বিরুদ্ধে।

গত বছরের জুলাইয়ে আদালতের রায়ে বলা হয়, চার পক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তার জন্য ৭০ শতাংশ দায়ী তারা। আর বাকি ৩০ শতাংশ দায় জাহিদের নিজের।

এ মামলায় জাহিদ কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন কি না, সে বিষয় পরে আদালত রায় দেবেন।