ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ১৬২

ভূমিকম্পে ধসে যাওয়া নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন। সিয়ানজুর, পশ্চিমা জাভা প্রদেশ, ইন্দোনেশিয়া
ছবি: রয়টার্স

ইন্দোনেশিয়ায় ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬২। আহত হয়েছেন ৩২৬ জন। সোমবার দেশটির প্রধান দ্বীপ জাভা মাঝারি মাত্রার এই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। এতে ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছে। ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা এসব তথ্য দিয়েছেন।

পশ্চিম জাভার গভর্নর রিদওয়ান কামিল ভূমিকম্পে ১৬২ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সিয়ানজুর শহর। মার্কিন ভূ–তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থাও ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল পশ্চিম জাভার সিয়ানজুর অঞ্চল বলে নিশ্চিত করেছে।
রাজধানী জাকার্তায়ও এই ভূ–কম্পন অনুভূত হয়েছে। ভূ–কম্পন শুরুর পর নগরের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ভবনের বাইরে নেমে আসেন।

ভূমিকম্পে সিয়ানজুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিয়ানজুর প্রশাসনের প্রধান হেরমান সুহেরমান স্থানীয় কমপাস টিভিকে বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে হতাহত ব্যক্তিদের নিয়ে আসা হচ্ছে। আহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে আঘাত পেয়েছেন।

ভূমিকম্পে সিয়ানজুর বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যোগাযোগব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। হেরমান সুহেরমান বলেন, ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে কুজেনাং এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সিয়ানজুর শহরের স্থানীয় প্রশাসনের মুখপাত্র আদম এএফপিকে বলেন, ভূমিকম্পে কয়েক হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। টেলিভিশনগুলোর খবরে দেখা যায়, সিয়ানজুরে কয়েকটি ভবন একেবারে ধসে পড়েছে এবং সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ সড়কে পড়ে আছে। সুহেরমান বলেন, হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা শহরের সায়াং হাসপাতালে ভিড় করছেন। নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। কারণ, শহরের বাইরে বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকেই এখনো ধসে পড়া বাড়িঘরে আটকে থাকতে পারেন।

ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত বাড়িঘরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আহত এক ব্যক্তি। সিয়ানজুর, পশ্চিমা জাভা প্রদেশ, ইন্দোনেশিয়া
ছবি: রয়টার্স

সুহেরমান আরও বলেন, ‘এই হাসপাতালে আমরা এখন গুরুতর আহত লোকজনকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। গ্রামগুলো থেকে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসছে। গ্রামগুলোতে এখনো বহু পরিবার রয়ে গেছে, যাঁদের উদ্ধার করা যায়নি।’

ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ প্রশমন সংস্থা (বিএনপিবি) বলেছে, ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০টির বেশি বাড়ি ধসে পড়ায় ৫ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। তবে ভূমিকম্পের কারণে ১৩ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন জানিয়ে গভর্নর রিদওয়ান বলেছেন, এসব মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে।    

হাসপাতালে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ভূমিকম্পের কারণে আহত অনেকে হাসপাতালের বাইরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন
ছবি: রয়টার্স

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি অন্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি। দেশটির অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরের ‘রিং অব ফায়ার’ জোনে হওয়ায় সেখানে প্রায়ই ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা দেখা যায়। এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশটিতে বড় ধরনের প্রাণহানিও ঘটে থাকে।

২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প ও পরে সুনামি আঘাত হানে। এতে ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল।