যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনে রাশিয়া-বেলারুশ সামরিক মহড়ায় কেন অংশ নিল ভারত
রাশিয়া-বেলারুশের যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে ভারত। গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস এ খবর জানিয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
রাশিয়ার নেতৃত্বে গত শুক্রবার ‘জাপাদ-২০২৫’ নামে পাঁচ দিনের এ সামরিক মহড়া শুরু হয়। দুই দেশের সীমান্তে চলা মহড়ায় ভারতীয় সেনাদের অংশগ্রহণ মস্কো ও নয়াদিল্লির সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আরোপের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও জাপাদ-২০২৫ সামরিক মহড়ায় ৬৫ সশস্ত্র সেনা পাঠানোর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
যেকোনো ধরনের আগ্রাসন প্রতিহত করতে সেনাদের প্রস্তুতি প্রদর্শনের জন্য রাশিয়া ও বেলারুশ নাটকীয় এ সামরিক মহড়া পরিচালনা করেছে।
এক লাখ সেনা এ মহড়ায় অংশ নিয়েছেন। মহড়ায় পারমাণবিক সক্ষমতার বোমারু যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। এমন একটি সময়ে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা চরমে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে পোল্যান্ডে রাশিয়ার ড্রোন ভূপাতিত করা হয়।
এক লাখ সেনা এ মহড়ায় অংশ নিয়েছেন। মহড়ায় পারমাণবিক সক্ষমতার বোমারু উড়োজাহাজ ও যুদ্ধজাহাজের প্রদর্শন করা হয়েছে। এমন একটি সময়ে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন ন্যাটো দেশের সঙ্গে উত্তেজনা চরমে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে পোল্যান্ডে রাশিয়ার ড্রোন ভূপাতিত করা হয়।
গতকাল ছিল সামরিক মহড়ার শেষ দিন। এদিন সামরিক পোশাক পরে আসা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘আজ আমরা জাপাদ-২০২৫ কৌশলগত মহড়ার চূড়ান্ত ধাপ পরিচালনা করছি।’
এ মহড়ায় অংশ নেওয়া ভারত একমাত্র বিদেশি শক্তি নয়। ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে তাস বলেছে, ইরান, বাংলাদেশ, বুরকিনা ফাসো, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ও মালির ‘টাস্কফোর্স এবং সামরিক দল’ এ মহড়ায় অংশ নিয়েছে।
কিন্তু ভারতীয় সেনাদের অংশগ্রহণ অবশ্যই বিশেষ। ভারতের সেনাবাহিনীর অভিজাত পদাতিক বাহিনী কুমায়ুন রেজিমেন্ট মহড়ায় অংশ নেওয়া ভারতীয় দলটির নেতৃত্ব দিয়েছে। ভারতীয় সেনাদের মহড়ায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির ‘সহযোগিতা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের মনোভাব জোরদার করা’।
রাশিয়ার এ মহড়ায় অংশগ্রহণ অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হবে। কারণ, এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের একজন ভারত, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং স্বাভাবিক অংশীদার। আমার বিশ্বাস, আমাদের বাণিজ্য আলোচনাগুলো ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বের সীমাহীন সম্ভাবনা উন্মোচনের পথ তৈরি করবে।
গত মাস থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, এ শুল্কের মধ্যে ২৫ শতাংশ ভারতের ওপর ‘জরিমানা’ হিসেবে আরোপ করা হয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে ভারতকে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ভারত–চীনের কাছে বিক্রি করা তেলের অর্থ ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে নিতে রাশিয়াকে সহায়তা করছে।
গত শুক্রবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘মনে হচ্ছে, অন্ধকারতম-গভীরতম চীনের ভেতরে আমরা ভারত ও রাশিয়াকে হারিয়ে ফেলেছি। একসঙ্গে তাদের ভবিষ্যৎ দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ হোক।’
পোস্টে তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলনে একসঙ্গে থাকা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, পুতিন ও মোদির একটি ছবিও যুক্ত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক কি আবার আগের মতো হবে
গত সপ্তাহেই ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ঘোষণা দেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা সমাধানে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের অভিযোগ করেছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্সে ট্রাম্পের ওই পোস্টের জবাবে বলেন, ‘ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং স্বাভাবিক অংশীদার। আমার বিশ্বাস, আমাদের বাণিজ্য আলোচনা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারত্বের সীমাহীন সম্ভাবনা উন্মোচনের পথ তৈরি করবে।’
মোদির ৭৫তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে গতকাল রাতে তাঁকে ফোন করেছিলেন ট্রাম্প।
নয়াদিল্লি এখনো নিজেদের অধিকাংশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম মস্কো থেকে কেনে। তবে দেশটি দুই দশক ধরে অস্ত্র আমদানিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে।
এক্সে এক পোস্টে এ জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে মোদি লেখেন, ‘আমার বন্ধু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমার ৭৫তম জন্মদিনে ফোন করা ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মতো আমিও ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বিত ও বৈশ্বিক অংশীদারত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নতুন নয়
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের শুরু সেই সোভিয়েত ইউনিয়নের যুগে। সে সময়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের অর্থনীতির অগ্রগতিতে ব্যাপক সহায়তা দিয়েছিল। শীতলযুদ্ধের সময় ভারত নিরপেক্ষ থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও দেশটি নিজের অধিকাংশ অস্ত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে কিনত।
নয়াদিল্লি এখনো নিজেদের অধিকাংশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম মস্কো থেকে কেনে। তবে দেশটি দুই দশক ধরে অস্ত্র আমদানিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে।