২৭ বছর পর কেন দেশে ফিরলেন থাই রাজার মেজ ছেলে

থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের মেজ ছেলে ভাচারাইসর্ন ভিভাচারাওংসে আজ মঙ্গলবার ব্যাংককে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশুদের একটি পরিচর্যাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন
ছবি: রয়টার্স

দীর্ঘ ২৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের মেজ ছেলে ভাচারাইসর্ন ভিভাচারাওংসে (৪২)। আজ মঙ্গলবার তাঁকে দেশটির রাজধানী ব্যাংককে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশুদের একটি পরিচর্যাকেন্দ্র পরিদর্শন করতে দেখা গেছে।

ভাচারাইসর্ন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করেন। সেখানে একটি আইনি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। এমন সময়ে ভাচারাইসর্ন থাইল্যান্ডে ফিরলেন, যখন দেশটির রাজ পরিবার কঠিন সময় পার করছে। গত ডিসেম্বর থেকে কোমায় রয়েছেন রাজার বড় সন্তান প্রিন্সেস বজ্রকিতিয়াভা নারেন্দিরা দেবিয়াভাতি (৪৪)।

ভাচারাইসর্নের পরিদর্শন করা পরিচর্যাকেন্দ্রটির নাম ফাউন্ডেশন ফর স্লাম চাইল্ড কেয়ার। প্রতিষ্ঠানটি রাজপরিবারের সহায়তায় পরিচালিত হয়। সেখানে জিনসের প্যান্ট ও কালো টি–শার্ট পরে উপস্থিত ছিলেন ভাচারাইসর্ন। এ সময় তিনি বাবা ও দাদা প্রয়াত রাজা ভুমিবল আদুলইয়াদেজের প্রতিকৃতির সামনে ছবি তোলেন।

পরিদর্শনের সময় ভাচারাইসর্ন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফিরে এসে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। আমি দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে অপেক্ষা করেছি। ফিরে আসাটা যেন স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো।’ যদিও এ নিয়ে রাজপ্রাসাদ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রাসাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও জবাব পাওয়া যায়নি।

দেশের ফেরার পর একটি অটোরিকশায় বসা নিজের ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন ভাচারাইসর্ন। ওই ছবিতে হাজারো লাইক এসেছে। আরেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার—যা বর্তমানে এক্স নামে পরিচিত, সেখানে ‘সন অব টেন রিটার্ন  টু থাইল্যান্ড’ হ্যাশট্যাগ প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজারবার ব্যবহার করা হয়েছে। ভাচারাইসর্নের বাবার আগের খেতাব ছিল রাজা দশম রামা (কিং রামা টেন)।

ভাচারাইসর্ন রাজা ভাজিরালংকর্নের দ্বিতীয় স্ত্রী সুজারিনে ভিভাচারাওংসের চার ছেলের মধ্যে দ্বিতীয়। সুজারিনে এক সময় অভিনেতা ছিলেন। ১৯৯৬ সালে ভাজিরালংকর্ন যখন যুবরাজ, তখন সুজারিনের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তাঁর। ফলে ভাচারাইসর্ন, তাঁর তিন ভাই, এক বোন ও মা রাজপরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, হারান রাজপরিবারের খেতাব। পরে তাঁরা বিদেশে পাড়ি জমান।

ভাচারাইসর্নের ছোট বোন শ্রীভান্নাভরি নারীরত্নকে অবশ্য পরে রাজপরিবারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাঁকে প্রিন্সেস খেতাবও দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। অশ্বরোহী হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তাঁর। ২০১৪ সালে তিনি এশিয়ান গেমস ফর থাইল্যান্ডে অংশ নিয়েছিলেন।

রাজা ভাজিরালংকর্নের মোট তিনবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। তাঁর সন্তানের সংখ্যা সাতজন। ২০১৯ সালে সিংহাসনে অভিষেকের কয়েকদিন আগে রানি সুথিদাকে বিয়ে করেন তিনি। সুথিদা একসময় তাঁর দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করতেন। রাজা ভাজিরালংকর্নের বয়স এখন ৭১ বছর। তবে এখনো উত্তরসূরীর নাম ঘোষণা করেননি তিনি।

এদিকে ভাচারাইসর্নের দেশে ফেরায় অবাক হয়েছেন থাইল্যান্ডের অনেক নাগরিক। অনেকে আবার বেশ খুশি। যেমন ৬৬ বছর বয়সী আংসানা সেপ্রাসিত বলেন, ‘এটা আমার মনকে নাড়া দিয়েছে। তিনি অনেক সময় ধরে দেশের বাইরে ছিলেন। আমার কাছে তিনি এখনও রাজপরিবারের একজন সদস্য।’