মোদির পর চীনে পুতিন, এসসিও সম্মেলন এবার কেন ভিন্ন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংফাইল ছবি: রয়টার্স

চীনে পৌঁছেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আজ রোববার তিনি দেশটির উত্তরাঞ্চলের নগরী তিয়ানজিনে পৌঁছান। এক দিন আগেই সেখানে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমন্ত্রণে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিতে পুতিন-মোদিসহ আরও প্রায় ২০টি দেশের নেতারা চীনে গেছেন।

বন্দরনগরী তিয়ানজিনে এসসিওর দুই দিনের এই সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ, চলবে আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত।

এসসিওর সদস্যদেশগুলো হলো চীন, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বেলারুশ। আরও ১৬টি দেশ পর্যবেক্ষক বা ‘সংলাপ সহযোগী’ হিসেবে যুক্ত আছে।

এই সম্মেলন শেষ হওয়ার পর আগামী বুধবার রাজধানী বেইজিংয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে।

এসসিওর সদস্যদেশগুলো হলো চীন, ভারত, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বেলারুশ। আরও ১৬টি দেশ পর্যবেক্ষক বা ‘সংলাপ সহযোগী’ হিসেবে যুক্ত আছে।

চীনে পুতিন

রাশিয়া ও চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো আজ সকালে পুতিনের তিয়ানজিনে পৌঁছানোর খবর জানিয়েছে। চীন ও রাশিয়া তাদের এসসিও জোটকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বিকল্প হিসেবে তুলে ধরে।

গতকাল শনিবার চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ায় পুতিনের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ পায়। পুতিন বলেন, এই সম্মেলন সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও হুমকির জবাব দিতে এসসিওর সক্ষমতা বাড়াবে এবং অভিন্ন ইউরেশীয় অঞ্চলে সংহতি জোরদার করবে।

রাশিয়া ভারতের মন জয় করতেও আগ্রহী। বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে যে ফাটল দেখা দিয়েছে, তা রাশিয়ার সামনে সুযোগ হয়ে এসেছে।
.লিম তাই ওয়েই, জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পূর্ব এশিয়া বিশেষজ্ঞ

পুতিন আরও বলেন,‘এসবই একটি অধিক ন্যায়সংগত বহুপক্ষীয় বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।’

তাইওয়ানের ওপর চীনের দাবি এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে তাদের বিরোধ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেইজিং ও মস্কো এসসিওর মতো প্ল্যাটফর্মকে প্রভাব বিস্তারের জন্য কাজে লাগাতে আগ্রহী।

এ নিয়ে সিঙ্গাপুরের নানইয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডিলান লোহ বলেন, ‘চীন দীর্ঘদিন ধরে এসসিওকে এমন এক অপশ্চিমা শক্তি জোট হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে, যা নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেবে। চীনের দাবি, এই জোট আরও বেশি গণতান্ত্রিক।’

ডিলান লোহ আরও বলেন, সংক্ষেপে এটি চীন–প্রভাবিত একটি বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পশ্চিমা আধিপত্যশীল ব্যবস্থার থেকে আলাদা।

এমন একটি সময়ে চীনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। গত বুধবার এই শুল্ক কার্যকর হয়।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের এই সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

২০০১ সালে এসসিও প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এটাই জোটটির সবচেয়ে বড় বৈঠক হতে চলেছে, যেখানে ২০টির বেশি দেশের নেতারা অংশ নেবেন।

লোহ বলেন, ‘এবারের সম্মেলনে এত দেশের নেতাদের অংশগ্রহণ চীনের প্রভাব বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং অপশ্চিমা দেশগুলোর সামনে এসসিওকে আকর্ষণীয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখানো হচ্ছে।’

সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক

এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে বেশ কয়েকজন নেতা এখন তিয়ানজিনে আছেন। তাঁদের মধ্যে মিসরের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা মাদবুলি, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতসহ কয়েকটি দেশের নেতাদের সঙ্গে গতকাল শনিবার সাক্ষাৎ করেছেন চীনর প্রধানমন্ত্রী সি।

সম্মেলনের ফাঁকে আরও কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের কথা রয়েছে।
যেমন আগামীকাল পুতিনের তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সঙ্গে যথাক্রমে ইউক্রেন সংঘাত ও তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে।

জাপানের সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পূর্ব এশিয়া বিশেষজ্ঞ লিম তাই ওয়েই বলেন, পুতিনের জন্য বিশ্বমঞ্চে খেলোয়াড় হিসেবে এসসিওর সব সুবিধা প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সমর্থনও তাঁর দরকার।

লিম এএফপিকে আরও বলেন, ‘রাশিয়া ভারতের মন জয় করতেও আগ্রহী। বাণিজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে যে ফাটল দেখা দিয়েছে, তা রাশিয়ার সামনে সুযোগ হয়ে এসেছে।’

আরও পড়ুন

এমন একটি সময়ে চীনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়ার তেল কেনার জন্য শাস্তিস্বরূপ আরও অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। অর্থাৎ মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। গত বুধবার এই শুল্ক কার্যকর হয়েছে।

নরেন্দ্র মোদি

জাপান সফর শেষে গতকাল সন্ধ্যায় চীনের তিয়ানজিনে পৌঁছান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটি ২০১৮ সালের পর তাঁর প্রথম চীন সফর।

এবারের সম্মেলনে এত দেশের নেতাদের অংশগ্রহণ চীনের প্রভাব বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং অপশ্চিমা দেশগুলোর সামনে এসসিওকে আকর্ষণীয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
ডিলান লোহ, সিঙ্গাপুরের নানইয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক

এ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তবে গত বছর অক্টোবরে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মোদি। পাঁচ বছরের মধ্যে যা ছিল দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। ওই সাক্ষাতের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের শীতলতা কমতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন