দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের ইথেওন এলাকায় হ্যালোইন উৎসবে হুড়োহুড়িতে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনার অনেক আগে অনুষ্ঠানস্থল থেকে পুলিশকে ফোন করা হয়েছিল। গত শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৪ মিনিটে পুলিশকে প্রথম ফোনটি করা হয়। আর দুর্ঘটনাটি ঘটে এর কয়েক ঘণ্টা পরে।
দক্ষিণ কোরিয়া পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ১১২–তে ফোন করেন একজন ব্যক্তি। তিনি বলেছিলেন, ওই দিন তিনিও ইথাওনে উৎসবে ছিলেন। সেখানকার মূল সড়ক ও হ্যামিল্টন হোটেলের কাছের একটি সরু গলিতে জনসমাগম বিপজ্জনক পর্যায়ে যেতে দেখে তিনি ওই নম্বরে ফোন করেন।
ফোনে তিনি বলেছিলেন, ‘এখানকার এ গলির অবস্থা এখন বিপজ্জনক। মানুষজন গলির এদিক–ওদিক ছোটাছুটি করছে। বেরোনোর পথ পাচ্ছে না। তবু অনেকে ওপরে উঠছে। এখানে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমি কোনোমতে বের হয়েছি। অনেক মানুষ। এটা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।’
যে পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ওই ব্যক্তি কথা বলছিলেন, সে কর্মকর্তা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি (ফোন করা ব্যক্তি) কি বোঝাতে চাচ্ছেন মানুষজন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না? সেখানে কি কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে? পুলিশ কর্মকর্তার প্রশ্নের জবাবে ওই ব্যক্তি তখন বলেন, ‘হ্যাঁ, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি ভয়াবহ।’
গত শনিবার ইথাওনের ওই দুর্ঘটনাস্থল থেকে পুলিশকে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানাতে এটিই ছিল প্রথম ফোনকল। এরপর তিন ঘণ্টায় সিউল পুলিশের কাছে অন্তত ১০টি ফোন করা হয়েছিল। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, সেদিন রাতে দুর্ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতি ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
একাধিক প্রমাণ, বিশেষজ্ঞ ও কয়েক দফায় সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে ওই দুর্ঘটনা ঠেকাতে পুলিশসহ সরকারি কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। উৎসবে সমবেত বিপুলসংখ্যক মানুষকে নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় কর্মকর্তা ও পুলিশের প্রস্তুতির ঘাটতির বিষয়টি এতে স্পষ্ট হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশপ্রধানের কথায়ও বিষয়টি স্পষ্ট। আজ মঙ্গলবার সকালে পুলিশপ্রধান বলেছেন, দুর্ঘটনা ঠেকাতে যেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল, সেভাবে তারা করতে পারেননি। ওই ঘটনায় ১৫৩ জন মানুষের মৃত্যুর পর এই প্রথম কোনো সরকারি কর্মকর্তা নিজেদের গাফিলতির কথা স্বীকার করলেন।