মিয়ানমারে আফিম চাষ বেড়েছে: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

খেত থেকে আফিম সংগ্রহ করছেন এক কৃষক
ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারে আফিম চাষ বেড়েছে। ২০২১ সালে জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর দেশটিতে ব্যাপকভাবে আফিমের উৎপাদন বেড়ে যায়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে কৃষকেরা আফিম চাষে ঝুঁকছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধবিষয়ক সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ২০২১ সালে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। এর পর থেকে সামরিক জান্তা ও অভ্যুত্থানবিরোধী বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াই চলছে। এতে মিয়ানমারের অর্থনীতি অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় আফিমের মতো মাদক চাষে ঝুঁকছেন দেশটির কৃষকেরা। আগের বছরগুলোর তুলনায় ২০২১-২২ পুরো মৌসুমে এক-তৃতীয়াংশ জমি আফিম চাষে ব্যবহার করা হয়েছে। এই জমির পরিমাণ ৪০ হাজার হেক্টরেরও বেশি।

গত বছরগুলোর তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে মিয়ানমারে ৯০ শতাংশ আফিম উৎপাদন বেড়েছে। এটি প্রায় ৭৯০ টনে গিয়ে ঠেকেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, মিয়ানমারের অর্থনীতিতে আফিমের ‘উল্লেখযোগ্য বিস্তার’ ঘটছে।

জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধবিষয়ক সংস্থার আঞ্চলিক প্রতিনিধি জেরেমি ডগলাস বলেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর মিয়ানমারের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও সুশাসন ব্যাহত হয়। এমন পরিস্থিতিতে আফিম চাষে আগ্রহী হওয়া ছাড়া কৃষকদের কিছুই করার ছিল না।

স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবি ও মাঠ জরিপের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এতে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে আফিম উৎপাদন অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি উল্টো চিত্র দেখা গেছে।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের আফিম অর্থনীতি প্রায় ২০০ কোটি ডলারের, যা ২০২১ সালে দেশটির জিডিপির ৩ শতাংশের সমপরিমাণ। তবে উৎপাদন বাড়লেও আফিমের মূল্য কমেনি। কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি আফিম ২৮০ ডলারে কেনা হচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় এই দাম ৬৯ শতাংশ বেশি। বিশ্বের শীর্ষ আফিম উৎপাদনকারী দেশ আফগানিস্তানে কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি আফিম ২০৩ ডলারে কেনা হয়।

বেশি দামে আফিম বিক্রি করলেও এতে কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতা তেমন বাড়ছে না। এর কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পেট্রল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন

গত বছর মিয়ানমারের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেছে। জেরেমি ডগলাস বলেন, অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে অনেক শ্রমিক শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে গিয়ে আফিম চাষে যুক্ত হয়েছেন।

এ বিষয়ে জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধবিষয়ক সংস্থার মিয়ানমারের কান্ট্রি ম্যানেজার বেনেডিক্ট হফম্যান বলেন, আফিম চাষের সঙ্গে দেশের অর্থনীতি জড়িত। পপি খেত ধ্বংস করলেই এর সমাধান পাওয়া যাবে না, কারণ, তাতে আরও সংকট বাড়বে। জীবিকা বাড়াতে আফিম চাষের বদলে অন্য শস্য উৎপাদনে কৃষকদের সহায়তা দিতে হবে।