শপথ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না মোদি, ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারে অনড় মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট

মোদি ও মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর
ফাইল ছবি দিন

আমন্ত্রণ পেলেও মালদ্বীপের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর বদলে ওই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন আর্থ (ধরিত্রী) বিজ্ঞানমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তিন দিনের সফরে মালদ্বীপ যাবেন তিনি। আজ বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। আগামী শুক্রবার মুইজ্জুর মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা।

চীনপন্থী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী মোদিকে তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মোদি যাবেন কি না, তা নিয়ে কয়েক দিন ধরে জল্পনাকল্পনা চলছিল। মোদির বদলে রিজিজুকে মনোনীত করার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট, ওই অনুষ্ঠানকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে ভারত রাজি নয়। তাই রাজনৈতিক দিক থেকে কম ওজনদার রিজিজুকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত।

অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মালদ্বীপ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা প্রশ্নাতীত। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও প্রবৃদ্ধিসংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘সাগর নীতি’ রূপায়ণে মালদ্বীপের বিশেষ অবস্থান রয়েছে। বলা হয়েছে, ভারত সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তার ও মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ রক্ষায় উন্মুখ।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৬১ বছরের ভারতপন্থী নেতা ইব্রাহিম সলিহকে হারিয়ে মুইজ্জু জয়ী হন। ভারতের পক্ষে সেটা ছিল এক বড় কূটনৈতিক ধাক্কা। কারণ, নির্বাচনে সলিহর প্রধান স্লোগান ছিল ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’। তাঁর বিপরীতে ৪৫ বছরের চীনঘেঁষা রাজনীতিক মুইজ্জুর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রধান বিষয় ছিল, সে দেশে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাদের ফেরত পাঠানো। নির্বাচনে তাঁর প্রধান স্লোগান ছিল ‘ভারত খেদাও’।

শপথ গ্রহণের প্রাক্কালে আজ মুইজ্জু রাজধানী মালেতে তাঁর বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর প্রথম কাজই হবে ভারতীয় সেনাদের ফেরত পাঠানো। তবে সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় সেনাদের জায়গায় চীনের সৈন্যদের আবাহন করা হবে না। মালদ্বীপ খুব ছোট দেশ। কোনো ভূকৌশলগত রেষারেষিতে আমরা পড়তে চাই না।’

গত দশকে মালদ্বীপকে দুটি হেলিকপ্টার ও একটি ছোট বিমান দিয়েছিল ভারত। উদ্দেশ্য ছিল, দেশের সমুদ্র সীমায় নজরদারি চালানোর পাশাপাশি যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উদ্ধারকাজে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু হেলিকপ্টার ও উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভারত যে ৭৫ জন সেনাসদস্যকে সে দেশে রেখেছে, তা ২০২১ সালে জানিয়ে দেয় সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

ওই সময় থেকে বিরোধীরা এই বিষয়কে তাদের ভারতবিরোধী প্রচারের প্রধান হাতিয়ার করে তোলে। নির্বাচনী প্রচারে মুইজ্জুও দেশের স্বাভিমানের প্রশ্নটিকে বড় করে তুলে ধরেন। ‘ভারত খেদাও’ স্লোগান হয়ে ওঠে তাঁর হাতিয়ার।

মালদ্বীপে চীনের উপস্থিতি প্রবল। নয়া জমানায় তা বাড়ার সম্ভাবনাও বেশি। ভারতের পক্ষে সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।