পরিবারের সঙ্গে গল্প করছিলেন, তখনই হঠাৎ গুলি

বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনায়ক বা বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব খুন হয়েছেন বা রাষ্ট্রযন্ত্র প্রভাবিত বিচারব্যবস্থায় তাঁদের ফাঁসি হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এসব ঘটনা সম্পর্কে এখনো পাঠকদের জানার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। তাঁদের আগ্রহের কথা চিন্তা করে আমাদের এই বিশেষ আয়োজন। আজ থাকছে ভুটানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জিগমে পালদেন দর্জির হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশেষ লেখা।

ভুটানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জিগমে পালদেন দর্জিছবি: সংগৃহীত

দিনটি ছিল ১৯৬৪ সালের ৫ এপ্রিল। ভুটানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জিগমে পালদেন দর্জি সেদিন বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। ঘুণাক্ষরেও আসন্ন বিপদ আঁচ করতে পারেননি। বুঝে উঠতে পারেননি, কিছুক্ষণ পরে তাঁর ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে।

ওই দিন ভারতীয় দূতের (এখন রাজনৈতিক কর্মকর্তা বলা হয়) সঙ্গে অবকাশযাপন কেন্দ্রে বৈঠক করেন জিগমে পালদেন দর্জি। বৈঠক শেষে ওই কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের সঙ্গে গল্প করছিলেন তিনি।

গল্পের মধ্যেই ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরাতে যাবেন; ঠিক তখনই বিকট শব্দ। সবাই অবাক! কী হলো? লাইটার বিস্ফোরণ হয়েছে না কি?

হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর অভিযুক্ত ঘাতক জাম্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি স্বীকারোক্তি দেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করতে ভুটানের ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ ব্রিগেডিয়ার নামগিয়েল বাহাদুর তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন।

উপস্থিত সবাই তখন অবাক হয়ে দর্জির শরীর থেকে রক্ত বের হওয়া দেখছিলেন। টেবিলের ওপর রক্তাক্ত বুলেট খেয়াল করতে খানিক সময় লেগে যায় তাদের।

ততক্ষণে হামলাকারী জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে বারান্দায় চলে যান। এরপর উধাও।

ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দর্জি মারা যান। হামলাকারীর গুলি তাঁর বুকের ডান পাশে ঢুকে বের হয়ে যায়।

ভুটানের রাজপ্রাসাদ, রাজনৈতিক পরিবার ও একজন সেনাপ্রধানের মধ্যে ধারাবাহিক নাটকীয় ঘটনার এটি কেবল শুরু ছিল। এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ভারত। একপর্যায়ে ভুটানে ছত্রীসেনা পাঠানোর চিন্তাভাবনাও করছিল ভারত। কিন্তু এটি করা হলে চীনের পক্ষ থেকেও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হতো। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে চীনের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল।

যা বলছেন ভারতের দুই কূটনীতিক

কয়েক দশক ধরে এই ঘটনাটি ধামাচাপা পড়েছিল। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফাইলগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে। পরে ন্যাশনাল আর্কাইভে স্থানান্তর করা হয়েছে।

ভারতীয় দুজন কূটনীতিক এই ঘটনাটি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করছেন। মাঝেমধ্যে ভূমিকাও রেখেছেন। তাঁরা হলেন রাজনৈতিক কর্মকর্তা অবতার সিং ও ভুটানে ভারতীয় ব্রিগেডের প্রথম কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার বি এন উপাধ্যায়।

হত্যাকাণ্ডের তিন দিন পর অভিযুক্ত ঘাতক জাম্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি স্বীকারোক্তি দেন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করতে ভুটানের ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ ব্রিগেডিয়ার নামগিয়েল বাহাদুর তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ওই সময় ভুটানের তৎকালীন রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা নিতে সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছিলেন।

তবে ৩৬ বছর বয়সী রাজা জানতেন না, এই হত্যাকাণ্ডে ব্রিগেডিয়ার বাহাদুরের জড়িত থাকার কথা বলেছেন সন্দেহভাজন হত্যাকারী জাম্বি। সুইজারল্যান্ড থেকে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়ে তিনি নির্দেশ দেন, তাঁর অবর্তমানে নিহত প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই লেনদুপ দর্জি ও ব্রিগেডিয়ার বাহাদুর দেশের প্রশাসনিক দায়িত্ব দেখভাল করবেন।

হত্যাকাণ্ডের চার দিন পর ভারতের কলকাতায় যান রাজা। দুদিন পরে সেখান থেকে থিম্পু যান। রাজাকে স্বাগত জানাতে থিম্পুর হেলিপ্যাডে অপেক্ষা করছিলেন ব্রিগেডিয়ার বাহাদুর। তখনো তিনি বুঝতে পারেননি, প্রধানমন্ত্রী হত্যাকাণ্ডে তাঁর নাম এসেছে।

তবে ৩৬ বছর বয়সী রাজা জানতেন না, এই হত্যাকাণ্ডে ব্রিগেডিয়ার বাহাদুরের জড়িত থাকার কথা বলেছেন সন্দেহভাজন হত্যাকারী জাম্বি। সুইজারল্যান্ড থেকে একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়ে তিনি নির্দেশ দেন, তাঁর অবর্তমানে নিহত প্রধানমন্ত্রীর ছোট ভাই লেনদুপ দর্জি ও ব্রিগেডিয়ার বাহাদুর দেশের প্রশাসনিক দায়িত্ব দেখভাল করবেন।

দেশে ফিরলেন রাজা

৫ এপ্রিলের ঘটনা নিয়ে অবতার সিং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি নোট পাঠান। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘দুপুরের কিছু আগে অনেক উঁচু থেকে দুটি হেলিকপ্টার নেমে আসে। থিম্পু হেলিপ্যাডের ওপর দিয়ে দুটি হেলিকপ্টারই রাজপ্রাসাদের দিকে উড়ে যায়। পরে একটি হেলিকপ্টার ফিরে এসে হেলিপ্যাডে অবতরণ করে।’

হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসেন ভারতের সাবেক রাজনৈতিক কর্মকর্তা আপা পন্ত। সম্ভবত কূটনৈতিক অভিজ্ঞতার কারণে নয়াদিল্লি তাঁকে সেখানে পাঠিয়েছিল।

অবতার সেবার প্রথমবারের মতো ভুটানে গিয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘শ্রী আপা পন্ত...হেলিকপ্টার থেকে বের হয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে থিম্পুর কমিশনারকে বলেন, রাজাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রাজপ্রাসাদে অবতরণ করেছে।’

অবতার আরও লিখেছেন, ‘একটি স্টেশন ওয়াগনে বসে আপা পন্ত রাজনৈতিক কর্মকর্তাকে (অবতার নিজেই) বলেছেন, খুনি জাম্বি স্বীকার করেছেন, ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ এবং আরও ১৪ জন এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। এঁদের মধ্যে রাজার স্ত্রীও আছেন।’ তবে জাম্বির লিখিত স্বীকারোক্তির রেকর্ডে রাজার স্ত্রী ইয়াঙ্কি সম্পর্কে কিছু ইঙ্গিত করা হয়নি।

পরদিন ভারতীয় হেলিকপ্টারে করে লেনদুপ দর্জিকে অজ্ঞাত স্থান থেকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসা হয়। শ্বাসরুদ্ধকর এক বৈঠক শেষে তিনি আবারও রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করেন।

তখনো জাম্বিকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার বাহাদুর। তবে তিনি স্নায়ুচাপে ছিলেন।

এমন অবস্থায় লেনদুপ দর্জিকে নিয়ে আসা হেলিকপ্টার সম্পর্কে ব্রিগেডিয়ার উপাধ্যায়ের কাছে কাছে জানতে চান ব্রিগেডিয়ার বাহাদুর। তবে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা তাকে কোনো তথ্যই দিতে পারেননি।

অবতার লিখেছেন, ‘এ কারণে নামগিয়েল বাহাদুরের মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে।’ রাজনৈতিক কর্মকর্তা জানতে পেরেছিলেন, লেনদুপ দর্জি রাজাকে প্রাসাদ থেকে নিরাপত্তা বাহিনী পাঠিয়ে দর্জির এলাকা নামসেলিংয়ে মোতায়েন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নোটে অবতার লিখেছিলেন, ‘এই বিষয়টি রাজনৈতিক কর্মকর্তা ও ব্রিগেডিয়ার উপাধ্যায়ের কাছে পুরোপুরি বোকামি মনে হয়েছে। কারণ, রাজপ্রাসাদে মাত্র ২০০ গার্ড ছিলেন। আর নামসেলিংয়ে ছিলেন ৫০ জন। অন্যদিকে থিম্পু সেনানিবাসে এক হাজারের বেশি সেনাসদস্য রয়েছেন।

ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব ওয়াই ডি গুনদেভিয়া ওই বছরের ২ মে দর্জির হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘নোটস অন ভুটান’ লেখেন।

এই নোটে গুনদেভিয়া উল্লেখ করেন, ‘তরুণ, মাথা গরম ও অপরিপক্ব রাজা লেনদুপ দর্জি যদি সেনানিবাসে থাকা সেনাদের উসকানি দিতেন, তাহলে হয়তো ভুটানের ইতিহাস থেকে দর্জি পরিবারকে চিরতরে উৎখাত করা হতো।

এমন পরিস্থিতিতে ব্রিগেডিয়ার উপাধ্যায় দ্রুত রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিকল্প ব্যবস্থার প্রস্তাব করেন। রাজাও তাতে সায় দেন।

অবতার আরও লিখেছেন, ‘ব্রিগেডিয়ার উপাধ্যায় রাজার সঙ্গে আলাপের জন্য কর্মকর্তা ও অন্যান্য পদমর্যাদার সব সেনাদের প্যারেড গ্রাউন্ডে দাওয়াত দিতে তাঁকে (রাজাকে) পরামর্শ দেন। তিনি রাজাকে বলেন, সেনাসদস্য ও কর্মকর্তারা সেখানে গেলে তিনি নিজেই তাঁর ভারতীয় কর্মকর্তা ও অন্যান্যদের নিয়ে অস্ত্রাগার ও গোলাবারুদের স্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।’

ব্রিগেডিয়ার উপাধ্যায় রাজার সঙ্গে দেখার করায় তাঁকে দোষারোপ করেন ব্রিগেডিয়ার বাহাদুর। তিনি বলেন, ভারত তাঁকে একটি সৌজন্যমূলক সফরের যুক্তিসংগত সুযোগ দিয়েছেন।

এই ঘটনা চরম রূপ নেয় ১৩ এপ্রিল। গুনদেবা লিখেছেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ এপ্রিল ভোরে রাজা নামগিয়েল বাহাদুরকে (ব্রিগেডিয়ার বাহাদুর) ডেকে পাঠান। তখন ব্রিগেডিয়ার উপাধ্যায়কে ব্রিগেডিয়ার বাহাদুর বলেন, তাঁর যাওয়ার মতো কোনো যানবাহন নেই। এ কথা বলার পর উপাধ্যায় তাঁর নিজের জিপ গাড়ি পাঠিয়ে তাঁকে রাজপ্রাসাদে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

৩৯ সেনা কর্মকর্তার বিচার

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোট ৩৯ সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ব্রিগেডিয়ার বাহাদুর ও অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তার হাত পিছমোড়া করে বেঁধে তাঁদের হাঁটিয়ে নেওয়া হয়। রাজার এই আদেশের পর নয়াদিল্লি আরও ভয়াবহ ঘটনার আশঙ্কা করে।

গুনদেভিয়া আরও লিখেছেন, ‘১৩ এপ্রিল আমরা যখন সেখানে ছিলাম, তখন একদমই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সেই ঘটনার অংশ হয়ে গেলাম। তখন মনে হলো, আমাদের প্রতিকূল সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আরও লিখেছেন, ‘এটি শুরু করতে গিয়ে মনে হলো, আমরা থিম্পুতে ছত্রীসেনার ব্যাটালিয়ন পাঠাতে পারি। হাশিমারা থেকে সড়কপথে আরও সেনা তাদের সহায়তা করতে পারবে। তবে বিষয়টি নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যে বিতর্ক হয়। কারণ, আমরা যদি জোর করি, তাহলে ভুটান সীমান্তের চুমবি ভ্যালিতে প্রবেশ করতে চীনকে উসকানি দেওয়া হতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার দায়ে ১৭ মে ব্রিগেডিয়ার বাহাদুরকে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ভুটান কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত বাচু ওয়াংডি ২৬ এপ্রিল স্বীকারোক্তি দেন। এর পরদিনই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ৮ মে তিনি মারা যান। ৪ জুলাই জাম্বিকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

এই বিচারের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের কারণ কী স্পষ্ট হয়ে গেল? গুনদেভা তা মনে করেন না। বীর বাহাদুরের বয়ানে খুনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা জানা গেল সেটা হচ্ছে, এই সেনাবাহিনীর মধ্যে বিরোধের জেরে পুরাতন গার্ডকে প্রধানমন্ত্রী কোণঠাসা করে ফেলতে পারেন। এই ভয়ে ব্রিগেডিয়ার বাহাদুর তাঁকে হত্যা করতে পারেন। সম্ভবত এই যুক্তি মোটেই যথেষ্ট নয়।

গুনদেভিয়া আরও লিখেছেন, ‘তাহলে এই হত্যার পেছনে আসল কারণ কী? সম্ভবত আমরা কখনোই সত্য ঘটনাটি জানতে পারব না।’

গুনদেভিয়া লিখেছেন, ‘নামসেলিং-এর দর্জিরা অথবা লেনদুপ দর্জি ব্যক্তিগতভাবে বলার চেষ্টা করেছেন, রাজার সৎমা ও তাঁর সৎভাই এবং রাজার তিব্বতী বংশোদ্ভূত স্ত্রী ইয়ানকি এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিলেন। কারণ, তাঁরা দর্জিদের ক্ষমতায় বেশ ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিলেন। তবে রাজা এটা মানতে নারাজ।’

গুনদেভিয়া আরও বলেন, ‘তবে একটি বিষয় নিশ্চিতভাবে জানা গেছে, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ও নামসেলিংয়ের দর্জি পরিবার রাজার সৎভাই ও সৎমায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন। স্ত্রী ইয়ানকির অননুমোদিত নানা পদক্ষেপের কারণে তাঁর ওপর রাজা জিগমি বিরক্ত ছিলেন। রাজাকে সরিয়ে তাঁকে ক্ষমতায় বসানো হবে—সৎমা এমন পরিকল্পনা করছিলেন। জিগমের বোন রানি কেসাং লার আমল থেকে দর্জিবিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছিল।

ভুটানের কিছু গোষ্ঠী একটি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিল, চীন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। ইয়াঙ্কির জড়িত থাকার সন্দেহ এই গুজবকে আরও উসকে দিয়েছিল।

ইয়াঙ্কির পরিবার একসময় তিব্বতে বসবাস করত। কয়েক প্রজন্ম আগে তারা ভুটানে পাড়ি জমিয়েছে।

তবে ওই সময় পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক স্টেটসম্যান-এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে চীনের হাত রয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার বাহাদুরকে দোষী সাব্যস্ত করা ভুটানের আদালত স্টেটসম্যান পত্রিকার প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে অবশ্য বলেছিলেন, কোনো বিদেশি শক্তি জড়িত ছিল, এ ধরনের কোনো প্রমাণ নেই। এই ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাই কেবল জড়িত।

অনেক ভারতীয় কূটনীতিকও মনে করতেন, এই ঘটনায় চীনের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

ভুটানে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত দিলিপ মেহতা বলেন, এটি জটিল এক ঘটনা ছিল। এর সঙ্গে চীনের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এটি একান্তই ভুটানের অভ্যন্তরীণ বিষয় ছিল।

কলকাতার টেলিগ্রাফ থেকে নেওয়া