নেপালে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির কর্ণধারও মারা যান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায়
নেপালে ইয়েতি এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় ৭২ আরোহীর কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। গত রোববারের এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বেসরকারি এই উড়োজাহাজ সংস্থাটির কর্ণধার অং শেরিং শেরপা চার বছর আগে মারা যান এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায়।
নেপালের তৎকালীন বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী রবীন্দ্র অধিকারী মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে তেরথুম জেলায় একটি নতুন বিমানবন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে যান। হেলিকপ্টারে মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন ব্যবসায়ী শেরিংও।
ইন্ডিয়া টুডে ও কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ছয়টার দিকে ছয় আরোহী নিয়ে হেলিকপ্টারটি উড্ডয়ন করে। ফেরার পথে একটি পাহাড়ের চূড়ায় ধাক্কা খায় হেলিকপ্টারটি। এতে পাইলটসহ সব আরোহী নিহত হন। উল্লেখ্য, পাঁচ আসনের হেলিকপ্টারটিতে ছয়জন চড়েছিলেন।
বেলা দেড়টার দিকে তাপলেজুংয়ের পাথিভরা জেলায় হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। হেলিকপ্টারটি এয়ার ডাইনেস্টি হেলি সার্ভিসের মালিকানাধীন। এটি নেপালের পুরোনো হেলিকপ্টার সংস্থাগুলোর একটি।
অং শেরিং ১৯৯৩ সালে এই হেলিকপ্টার সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর ছোট ভাই টেন্ডি শেরপাও ১৯৯৮ সালে এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান। ইয়েতি এয়ারলাইনস ছাড়া অং শেরিং শেরপা তারা এয়ারলাইনসের মালিক। নেপালের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা হিমালয়ান এয়ারলাইনসও তাঁর মালিকানাধীন।
অং শেরিং তাঁর তিন ভাইয়ের সঙ্গে সোলুখুম্বুর প্যাঙ্গোম গ্রামে এভারেস্টের ছায়ায় বেড়ে ওঠেন। ফলে পাহাড়ই তাঁর জীবন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার গতিপথ ঠিক করে দিতে এগিয়ে আসবে এবং খ্যাতি ও সম্পদ এনে দেবে, এটাই ছিল স্বাভাবিক। তবে তাঁর মৃত্যুরও প্রথম সাক্ষী হয়েছিল এই পাহাড়।
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে বড় ভাই সোনামের অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণ কোম্পানি থামসেরকুতে যোগ দেন অং শেরিং। নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় একটি পাহাড়ের নামে কোম্পানির নাম রাখা হয়। সেখানে পর্যটন ব্যবসার খুঁটিনাটি জানতে পারেন তিনি। এই সুবাদে যোগাযোগ বাড়াতে থাকেন অং শেরিং।
নব্বইয়ের দশকে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণের ফলে নেপালে পর্যটন খাত বিকশিত হয়। কিন্তু সেটা কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয় সীমিতসংখ্যক উড়োজাহাজের কারণে। থামসেরকু রাষ্ট্রীয় রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইনসের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিল। সংস্থাটির সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ সক্ষমতা থাকলেও ফ্লাইট ছিল সীমিত। অং শেরিং ও তাঁর ভাইয়েরা জানতেন, নিজেদেরই উদ্যোগ নিতে হবে এবং তাঁরা ইয়েতি এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠা করলেন।
থামসেরকুর বাজিতে সাফল্য আসে। ১৯৯৮ সালে কোম্পানিটির পুরো দায়িত্ব নেন অং শেরিং। মাত্র একটি টুইন ওটার উড়োজাহাজ দিয়ে যাত্রা শুরুর এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ রুটে সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ সংস্থায় পরিণত হয় ইয়েতি এয়ারলাইনস।
অং শেরিং স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন। দুই ছেলের একজন ইয়েতি এয়ারলাইনসেরই পাইলট।