আফগানিস্তানে ক্ষুধার তাড়নায় সন্তান বিক্রির চেষ্টা

আফগান নারী
রয়টার্সের ফাইল ছবি

আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও দেশটির মানুষের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। দুবেলা দুমুঠো খাবার পাচ্ছে না অনেক পরিবার। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তাও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। তাই খাবারের জোগান দিতে কেউ কেউ সন্তান বিক্রি করছেন বলেও খবর আসছে। খবর টোলো নিউজের।

উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ বালখের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, সন্তান বিক্রি করতে চায়, এমন একটি পরিবারকে সহায়তা দিয়েছেন তাঁরা। ওই পরিবারের আর্থিক দুর্দশা চরম আকার ধারণ করেছে। খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছিলেন না পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাই দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন তাঁরা।

বালখ প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর নুরুল হাদি আবু ইদ্রিস স্থানীয় টোলো নিউজকে বলেন, ‘আমরা কয়েক দফায় দাতব্য সংস্থা রেডক্রসের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমাদের কীভাবে সাহায্য করতে হবে, প্রতিষ্ঠানটির সদস্যদের আমরা সেটা জানিয়েছি।’

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে রেডক্রসের দাতব্য কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইয়ার মোহাম্মদ ফারুকী। তিনি বলেন, ‘বালখ প্রদেশে রেডক্রসের গুদামে কিছু খাবার আছে। অল্প কিছু খাবার দিয়েই আমরা আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি।’

আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত পরিবার যে শিশুকে বিক্রি করতে চেয়েছিল, তার মায়ের নাম নাসরিন। তিনি বলেছেন, আর্থিক দুর্দশার কারণে তিনি তাঁর সন্তানকে বিক্রি করার চেষ্টা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারটিকে সাহায্য করা হয়। তাঁদের চেষ্টায় শিশুটিকে বিক্রি করা ঠেকানো গেছে।

নাসরিন নামের ওই নারী বলেন, ‘আমি এখন কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যে আছি। আমাদের খাওয়ার কিছু নেই, ঘরে আলো জ্বালাব, এমন কোনো জ্বালানি ঘরে নেই। শীতের জন্য আমি কোনো প্রস্তুতিও নিতে পারিনি। এমন পরিস্থিতিতে আমি আমার কন্যাশিশুটিকে বিক্রি করে শীতের জন্য কিছু জোগাড় করতে চেয়েছিলাম।’ নাসরিন আরও জানালেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে স্থানীয় সরকার ও দাতব্য সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে তাঁদের কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না।

নাসরিন বলেন, ‘আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েকবার দেখা করেছি। তাদের কাছে সাহায্য ভিক্ষা চেয়েছি এবং অনুরোধ করেছি, যদি কোনো সাহায্য আসে, তাহলে আমার নামটাও যেন তালিকায় থাকে। আমার নাম লিখে নেওয়া হয়েছে বলে তারা আমাকে জানিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি কোনো ধরনের সহায়তা পাইনি।’

মুসকা নামের নাসরিনের এক মেয়ের আকুতি, ‘আমরা খুব কষ্টে দিন পার করছি। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন, যাতে আমার বোনকে বিক্রি করতে না হয়।’

শাহখানম নামের নাসরিনের একজন প্রতিবেশী বলেন, ‘দু–তিন দিন ধরে শুনছি, তারা মেয়েকে বিক্রি করবে। সত্যি কথা বলতে, এটা শুনে আমি খেতে পারছি না।’