মিয়ানমারে গণহারে হত্যা, যৌন সহিংসতাসহ ক্রমবর্ধমান যুদ্ধাপরাধের জোরালো প্রমাণ সংগ্রহ করেছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দল। পাশাপাশি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য নথিপত্র প্রস্তুত করছে তারা।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রপন্থী নেতা অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে জান্তা সরকার। এরপর থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে প্রাণঘাতী সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলেছে।
জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দল ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমার (আইআইএমএম) বলছে, তাদের কাছে প্রমাণ আছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী মিলিশিয়াদের দ্বারা নির্লজ্জভাবে যুদ্ধাপরাধের ঘটনা নিয়মিত বেড়েই চলেছে।
তদন্ত দলটি অপরাধের তালিকায় নির্বিচার আকাশ থেকে বোমা হামলা, গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া এবং বেসামরিক ব্যক্তি ও আটক যোদ্ধাদের গণহত্যা, সেই সঙ্গে নির্যাতন এবং ভয়ংকর যৌন সহিংসতার বিষয়গুলো উল্লেখ করেছে।
তদন্ত দলটি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে ‘গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের সংজ্ঞায় পড়ে এমন ঘটনার সংখ্যা’ বেড়েছে।
মেকানিজম প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান এক বিবৃতিতে বলেন, মিয়ানমারে প্রতিটি মৃত্যুই বেদনার। কিন্তু আকাশ থেকে বোমা হামলা ও গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে পুরো সম্প্রদায়ের ওপর যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়, তা মর্মান্তিক।’
আইআইএমএমের প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান বলেছেন, ‘আমাদের প্রমাণগুলো মিয়ানমারে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের নাটকীয় বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে। সেখানে বেসামরিক মানুষের ওপর ব্যাপক ও পরিকল্পিত হামলা চালানো হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা এমনভাবে নথিপত্র তৈরি করছি, যা অপরাধী প্রত্যেককে দায়ী করার জন্য আদালতে ব্যবহার করা যেতে পারে।’
আন্তর্জাতিক গুরুতর যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ ও বিচারের জন্য নথি প্রস্তুত করতে ২০১৮ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ আইআইএমএম গঠন করে।
যদিও দলটিকে কখনো মিয়ানমারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। দলটি বলছে, তারা ৭০০-এর বেশি সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা ২ কোটি ৩০ লাখের বেশি তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবৃতি, নথি, ছবি, ভিডিও, ফরেনসিক প্রমাণ ও স্যাটেলাইট ইমেজ রয়েছে।
দলটি বলছে, তাদের পরিকল্পনা হলো আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহযোগিতায় ‘সবচেয়ে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহ বাড়ানো।’
তদন্তকারীরা বলেছেন, এসব অপরাধের পেছনে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিশেষ করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা আছে, এমন তথ্য-প্রমাণ খোঁজা হচ্ছে।