যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণার মধ্যে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের হামলায় নিহত ১০
পাকিস্তান ও আফগানিস্তান নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির পরও সীমান্ত এলাকায় আলাদা হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই দেশের কর্মকর্তারাই পাল্টাপাল্টি হামলার দাবি করেছেন। পাকতিকা প্রদেশে স্থানীয় আট ক্রিকেটারসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের আলাদা আলাদা হামলায় আফগানিস্তানে প্রাণহানির সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় কয়েক দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সম্প্রতি দুই পক্ষের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। গতকাল শুক্রবার গ্রিনিচ মান সময় বেলা ১টার সময় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
তবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কূটনীতিকেরা বলেছেন, উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও ৪৮ ঘণ্টা বৃদ্ধির বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
আফগান কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলীয় আফগানিস্তানে হামলা চালিয়েছে।
স্থানীয় পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদউল্লাহ আমিনি মাউয়িআ বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশ এবং পাকিস্তান সীমান্তসংলগ্ন আরও দুই এলাকায় বোমা হামলা হয়েছে। এ ছাড়া খানাদার গ্রামে একটি বেসামরিক বাড়িতেও বিমান হামলায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তবে তিনি এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকতিকা প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ ইসমাইল মাউয়িআ বলেছেন, বারমাল ও উরগুন এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। তিনি হতাহতের বিস্তারিত তথ্য জানাননি।
পাকতিকা প্রাদেশিক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকতিকা প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদ ইসমাইল মাউয়িআ বলেছেন, বারমাল ও উরগুন এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। তিনি হতাহতের বিস্তারিত তথ্য জানাননি।
আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র সাইয়েদ নাসিম সাদাতের বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলায় আটজন স্থানীয় ক্রিকেটার নিহত হয়েছেন। তাঁরা একটি ম্যাচ খেলার পর উরগুন এলাকায় ফিরছিলেন।
বিমান হামলার বিষয়ে আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছিল বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে কোনো পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।
একজন পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে নতুন বিমান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি তো আফগান তালেবানের সঙ্গে হয়েছে। আফগানিস্তানে অবস্থানরত ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীদের সঙ্গে হয়নি, যাঁরা পাকিস্তানে হামলা চালায়।’
আফগানিস্তানে হামলার আগে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, সীমান্তের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি কম্পাউন্ডে পাকিস্তানি তালেবানের (টিটিপি) পৃষ্ঠপোষকতায় একটি আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এতে ওই এলাকায় কয়েকজন নিহত হন।
আফগানিস্তানে হামলা হওয়ার আগে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, সীমান্তের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি কম্পাউন্ডে পাকিস্তানি তালেবানের (টিটিপি) পৃষ্ঠপোষকতায় একটি আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এতে ওই এলাকায় কয়েকজন নিহত হন।
পাকিস্তানের পুলিশ কর্মকর্তা ইরফান আলী বলেছেন, উত্তর ওয়াজিরিস্তান অঞ্চলের মির আলী শহরের একটি সামরিক কম্পাউন্ডে পাকিস্তান তালেবান হামলা চালিয়েছে।
হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। এক কর্মকর্তার বরাতে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রচণ্ড গোলাগুলিতে তিন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এতে কোনো সেনার হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর ওয়াজিরিস্তানের একটি সামরিক ক্যাম্পের বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে হামলার ঘটনায় সাতজন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন।
কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, আরও দুজন যোদ্ধা সেই কম্পাউন্ডে প্রবেশের চেষ্টাকালে তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কমপক্ষে ১৩ জন আহত হয়েছেন। ওই কর্মকর্তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
পাকিস্তানের জিও নিউজের খবরে বলা হয়েছে, উত্তর ওয়াজিরিস্তানের একটি সামরিক ক্যাম্পে আত্মঘাতী হামলায় টিটিপির চার হামলাকারী নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো ক্ষতি হয়নি।
এদিকে তিন পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং এক আফগান তালেবান সূত্রের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রতিনিধিদের মধ্যে কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনা হবে। আলোচনার জন্য পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যে দোহায় পৌঁছেছে। আর আফগান প্রতিনিধিদল আজ শনিবার পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্রগুলো তাদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।