‘ভারতপন্থী’ প্রেসিডেন্ট সলিহর হার, জয় ‘চীনপন্থী’ মুইজ্জুর

মোহামেদ মুইজ্জু (বাঁয়ে) ও ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটে জয়ী হয়েছেন বিরোধী দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেসের (পিএনএস) মোহামেদ মুইজ্জু। শনিবার রাতে ভোটের ফলাফল গণনা শেষে এক্সে (সাবেক টুইটার) পরাজয় স্বীকার করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। একই সঙ্গে মোহামেদ মুইজ্জুকে অভিবাদন জানিয়েছেন তিনি।

মালদ্বীপে প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া এ দুই প্রার্থীর মধ্যে গতকাল দ্বিতীয় দফার ভোট হয়। দ্বিতীয় দফায় মোহামেদ মুইজ্জু পেয়েছেন ৫৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ভোট। আগামী ১৭ নভেম্বর দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন তিনি। এর আগ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন মোহাম্মদ সলিহ।

দেশটির নিয়ম অনুযায়ী ভোটে কোনো প্রার্থী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা (৫০ শতাংশের বেশি ভোট) না পেলে নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়ায়। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী প্রার্থীর মধ্যে শনিবার দ্বিতীয়বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। প্রথম দফার নির্বাচনে মুইজ্জু পেয়েছিলেন ৪৬ শতাংশ ভোট। আর সলিহ ৩৯ শতাংশ।

শনিবার স্থানীয় সময় সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। একজন নির্বাচন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে এএফপিকে বলেন,  ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশন জানায়, ভোট গ্রহণ শুরুর প্রথম দুই ঘণ্টায় মোট ২ লাখ ৮২ হাজার ভোটারের এক–চতুর্থাংশ ভোট প্রয়োগ করেছেন।

উল্লেখ্য, চীন–ভারতের শক্তিমত্তার খেলার ছায়ায় অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে মোহাম্মদ সলিহ (৬১) জয়ী হলে দ্বীপ দেশটিতে নয়াদিল্লির প্রভাব বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। সলিহর সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক ভালো। অপরদিকে মোহামেদ মুইজ্জু (৪৫) চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত।

রাজধানী মালেতে মুইজ্জু ও সলিহ পৃথক বুথে নিজেদের ভোট দেন। সে সময় দুজনই জিতবেন বলে সাংবাদিকদের কাছে আশা ব্যক্ত করেন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সলিহ এবারের নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য লড়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগে গত বছরের ডিসেম্বরে বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিনের ১১ বছরের কারাদণ্ড হয়। ইয়ামিনের জায়গায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মুইজ্জু।

মালদ্বীপ ভারত মহাসাগরের মাঝখানে একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে।  প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্য দিয়ে যে জাহাজ চলাচলের রুট বা শিপিং লাইনগুলো আছে, তার মাঝামাঝি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে মালদ্বীপ। তাই দেশটিতে নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে ভারত ও চীন প্রবল চেষ্টা চালাচ্ছে। মুইজ্জুর দল চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড অবকাঠামো কর্মসূচি থেকে বড় ধরনের আর্থিক সুবিধা নিতে আগ্রহী। সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিনও ছিলেন চীনঘেঁষা। তিনি মালদ্বীপে নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ভারতকে প্রত্যাখ্যান করে চীনের কাছ থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

২০১৮ সালে ইয়ামিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসেন ৬১ বছর বয়সী সলিহ। অভিযোগ রয়েছে, ইয়ামিন দেশটিকে চীনা ঋণের ফাঁদে ঠেলে দিয়েছে। ইয়ামিনের চীনঘেঁষা নীতির নয়াদিল্লিকে শঙ্কিত করে তুলেছিল। ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।

এদিকে ভারত কৌশলগত জোট কোয়াডের সদস্য। চার সদস্যের এই জোটের অন্য তিন সদস্যদেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। ভারতের অতিমাত্রায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব দ্বীপরাষ্ট্রটির বেশির ভাগ মানুষ পছন্দ করেন না। অথচ সলিহর আমলে সেই প্রভাব অনেকটা বেড়ে যায়।

মোহামেদ মুইজ্জু এর আগে জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত হলে ইয়ামিনকে মুক্ত করবেন। দুর্নীতির দায়ে তিনি ১১ বছরের দণ্ডিত হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। ইয়ামিনের জায়গায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মুইজ্জু।