রাখাইনে আরাকান আর্মির ওপর বিমান হামলা

কুচকাওয়াজে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যরাফাইল ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহীদের ওপর বড় পরিসরে হামলা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা। যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ থেকে বিদ্রোহীদের অবস্থান নিশানা করে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। হামলায় একাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে খবর দিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

রাখাইনের রামরি দ্বীপের রামরি শহরে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) অবস্থান লক্ষ্য করে জান্তা সেনারা অব্যাহত বোমা হামলা চালাচ্ছে। চীনের অর্থায়নে দ্বীপটিতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা থাকায় দ্বীপটির নিরাপত্তা জান্তা সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

গত মাসে রাখাইনে সামরিক ফাঁড়ি ও নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান নিশানা করে হামলা শুরু করে আরাকান আর্মি। এরপর জান্তা সেনারা পাল্টা হামলা শুরু করলে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘাত শুরু হয়। এর মধ্যে গত দুই দিন বিদ্রোহীদের নিশানা করে বড় পরিসরে হামলা চালিয়েছে জান্তারা।

গত অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সঙ্গে জান্তা সরকারের সেনাদের সশস্ত্র লড়াই চলছে। এই জোটে আরাকান আর্মিও আছে। রাখাইনে জান্তার বড় পরিসরে হামলা শুরুর মধ্য দিয়ে পশ্চিমাঞ্চলেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ল।

থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের এক টেলিগ্রাম বার্তায় জানানো হয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ থেকে রামরি শহরে বোমা হামলা শুরু করে জান্তা সেনারা। এর আগে গত সোমবার আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াই চলাকালে জান্তা সেনারা যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজের সাহায্য চায়।

আরাকান আর্মির দাবি, সোমবার লড়াই চলাকালে জান্তা সেনাদের সামরিক সরঞ্জাম জব্দ করেছে তারা। তবে এ বিষয়ে তারা আর বিস্তারিত কিছু জানায়নি। এদিকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, হামলায় রামরিতে একাধিক বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। তবে এর নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো হয়নি।

রামরিতে চীনের অর্থায়নে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে রাখাইনের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ায় নির্মাণকাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। চায়না-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডর প্রকল্পের প্রাণকেন্দ্রে আছে বন্দরটি। এটি নির্মিত হলে সরাসরি ভারত মহাসাগরে ঢুকতে পারবে চীন।

গত সপ্তাহে আরাকান আর্মি দাবি করে, রাখাইন লাগোয়া চিন রাজ্যে ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর তিনটি সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। চিন বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের একটি রাজ্য।

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে আসছে আরাকান আর্মি। এর আগে ২০১৯ সালে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে গোষ্ঠীটির বড় পরিসরে সংঘাত শুরু হয়। সেই সময় রাজ্যটির কয়েক লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছিলেন।

এর আগে ২০১৭ সালে রাখাইনে ব্যাপক হামলা শুরু করে সেনাবাহিনী। হামলার মুখে রাজ্যটিতে সংখ্যালঘু সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তারা এখনো বাংলাদেশে আছে। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন।