উত্তপ্ত নাগোরনো–কারাবাখ, নতুন করে যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা
আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিরোধপূর্ণ নাগোরনো–কারাবাখ অঞ্চল। এখানে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সেনাদের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার তুমুল লড়াই হয়েছে। আর্মেনিয়া জানিয়েছে, লড়াইয়ে তাদের ৪৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন। তবে আজারবাইজানের পক্ষ থেকে এখনও হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়নি। ২০২০ সালের পর এই অঞ্চলে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা, যা ওই অঞ্চলে নতুন করে যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা তৈরি করেছে। তাই দুই পক্ষের কাছে লড়াই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভেতরে অবস্থিত একটি ভূখণ্ড, তবে এখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশই জাতিগতভাবে আর্মেনীয়। আজারবাইজানের অভিযোগ, নাগোরনো-কারাবাখসহ আশপাশের বিশাল আজারবাইজানি ভূখণ্ড দখল করে রেখেছিল আর্মেনিয়া। এই অঞ্চল নিয়ে ১৯৯১ ও ২০২০ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়ায় দুই দেশ।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সীমান্ত সংঘাত থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। নিহত হন প্রায় ৬ হাজার ৫০০ মানুষ। ছয় সপ্তাহের লড়াইয়ের পর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় চুক্তির মাধ্যমে নিজ ভূখণ্ড উদ্ধার করে আজারবাইজান। তবে চুক্তিতে নাগোরনো-কারাবাখের ‘স্ট্যাটাস’ অনিষ্পন্ন ছিল। মস্কো সেখানে ২ হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে।
যেকোন সামরিক লড়াই দ্রুত বন্ধ করতে হবে। সামরিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নাগোরনো–কারাবাখের বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে না।
এর আগে সোভিয়েত পতনের পর ১৯৯১ সালের সর্বাত্মক যুদ্ধেও নাগোরনো–কারাবাখ অঞ্চলে প্রাণ যায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষের। তবে বিরোধ চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া ও ‘স্ট্যাটাস’ নির্ধারিত না হওয়ায় আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সেনাদের মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে সীমান্তে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সবশেষ এই সংঘাতের জেরে দক্ষিণ ককেশাসের দেশ দুটির মধ্যে আবার পুরোদমে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবারের লড়াইয়ের পর আজারবাইজানের বিরুদ্ধে ‘আগ্রাসী আচরণের’ অভিযোগ তুলেছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান। রাজধানী ইয়েরেভানের পার্লামেন্টে তিনি বলেন, ‘রাতারাতি শুরু হওয়া লড়াইয়ে আজারবাইজান থেকে ভারী গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। আমাদের ৪৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আজারবাইজানের সাম্প্রতিক আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ আর্মেনিয়ার অভিযোগ, আজারবাইজানের বাহিনী তাদের ভূখণ্ডে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সীমান্ত সংঘাত থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। নিহত হন প্রায় ৬ হাজার ৫০০ মানুষ। ১৯৯১ সালের সর্বাত্মক যুদ্ধেও প্রাণ যায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষের।
অন্যদিকে আজারবাইজানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ইলনুর মামাদোভা গতকাল বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের সেনা চৌকিতে একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে আর্মেনিয়া। গত কয়েকদিনে বেসরকারি অবকাঠামোতেও হামলা হয়েছে। মঙ্গলবার এসব হামলা মাত্রা ছাড়ালে আমরাও পাল্টা জবাব দিয়েছি। অন্যদিকে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের বাহিনী আর্মেনীয়দের উসকানির জবাব দিচ্ছে। বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানো হচ্ছে না।
রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত আর্মেনিয়া। মঙ্গলবারের লড়াইয়ের পর মস্কো জানিয়েছে, দুই পক্ষ দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব কার্যকরে সম্মত হয়েছে। এক বিবৃতিতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নাগোরনো–কারাবাখে লড়াইয়ের ঘটনায় মস্কো ভীষণ উদ্বিগ্ন। নতুন করে যাতে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু না হয় তাই গতকাল সকালে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। দুই পক্ষ প্রস্তাবের শর্ত মেনে চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেওয়া ও সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার দেবে তুরস্ক।
অন্যদিকে তুরস্কের মিত্র দেশ আজারবাইজান। মঙ্গলবারের লড়াইয়ের বিষয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিত সাভাসগলু বলেন, ‘দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেওয়া ও সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার দেবে তুরস্ক।’
সাম্প্রতিক লড়াইয়ের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘যেকোন সামরিক লড়াই দ্রুত বন্ধ করতে হবে। সামরিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নাগোরনো–কারাবাখের বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে না।’
এদিকে চলমান লড়াই নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে যেকোন ধরনের ভূমিকা পালনের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল।
বিবিসি ও আল–জাজিরা অবলম্বনে