ফেরারি বেচে গড়লেন কুকুরদের আশ্রয়কেন্দ্র

আশ্রয়কেন্দ্রে কুকুরের সঙ্গে হিরোতাকা সাইতোছবি: ওয়ান্সফ্রির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

জাপানে ৫৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আত্মহত্যার চেষ্টা করছিলেন। এমন সময় নিজের পোষা কুকুর তাঁর জীবন বাঁচিয়ে দেয়। এরপর তিনি বিলাসবহুল স্পোর্টস কার বিক্রি করে দেন। সেই অর্থ দিয়ে ‘অসুস্থ কুকুরের’ জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলেন।

আশ্রয়কেন্দ্রটির নাম ‘ওয়ান্সফ্রি’। এটি জাপানের ইয়াইজু শহরে অবস্থিত। বিনা মূল্যে অসুস্থ কুকুরের সেবা দেওয়া হয় সেখানে।

জাপানের দ্য আসাহি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই আশ্রয়কেন্দ্রটিতে এমন সব কুকুরের দেখাশোনা করা হয়, যা অনেক প্রাণীপ্রেমীর পক্ষে সামলানো কঠিন।

আশ্রয়কেন্দ্র ওয়ান্সফ্রির প্রধান হিরোতাকা সাইতো। তিনি জানান, কুকুরগুলো মানুষকে নির্বিচার কামড়ায়, গর্জন ও চিৎকার করে। আগে নির্যাতনের শিকার হওয়ায় তারা এ ধরনের আচরণ করে।

সাইতো একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন। ১২ বছর আগে আর্থিক সংকটের কারণে তাঁর ব্যবসা বেশ ক্ষতির মুখে পড়ে। এটি তাঁর জীবনে ভয়াবহ মোড় নেয়। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে তিনি বাড়ি ছেড়ে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা করেন।

সাইতো বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তাঁর পোষা কুকুর দরজার সামনে বসে যাওয়া-আসার পথ আটকে দেয়। ফলে তিনি ঘর থেকে বের হতে পারেননি এবং তাঁর আত্মহত্যার পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়।

কুকুরটির এমন আচরণ সাইতোর পরিকল্পনা পাল্টে দেয়। তিনি আত্মহত্যার ইচ্ছা বাদ দিয়ে মানুষকে কামড়ানো কুকুর উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেন। এ ধরনের কাজ জাপানে তখনো তেমন একটা পরিচিতি পায়নি।

জাপানের আরেকটি সংবাদমাধ্যমকে সাইতো বলেন, ‘আমি যখন বুঝতে পারলাম একটি কুকুরের কারণে আমার জীবন বেঁচে গেছে, তখন মনে হলো বাকি জীবনটা কুকুরদের বাঁচিয়ে কাটিয়ে দিতে পারি। আমার সব অর্থ কুকুরদের জন্য ব্যয় করব।’

পরিকল্পনা অনুযায়ী, সাইতো তাঁর বিলাসবহুল ফেরারি স্পোর্টস কারটি বিক্রি করে জমি কেনেন। সেখানে একটি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলেন। যেখানে কুকুরগুলো স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বোঝাতে চাই, তারা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য।’

আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছেন সাইতো, তবু থেমে যাননি তিনি। বর্তমানে ‘ওয়ান্সফ্রি’ আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০টি কুকুর ও ৮টি বিড়াল আছে।

সাইতো বলেন, তিনি আশ্রয়কেন্দ্রটি আরও বড় করতে চান। ২০২৮ সালের মধ্যে অন্তত ৩০০ কুকুরকে সেখানে আশ্রয় দিতে চান তিনি। এ জন্য মানুষের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।

সাইতো আরও বলেন, ‘আমি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো আছি। এটা বুঝতে পারা আমার জন্য এক বিশাল সৌভাগ্যের বিষয়।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইতোর এই গল্প ব্যাপকভাবে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘কুকুরেরও মানুষের মতো অনুভূতি থাকে। তারা আমাদের সম্মান ও ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য। আমি সাইতোকে স্যালুট জানাই।’

আরেকজন লিখেছেন, ‘আমি এই কেন্দ্রটির জন্য কোনো না কোনোভাবে সাহায্য করতে আগ্রহী।’