পুরুষ ইঁদুরের কোষ থেকে ডিম্বাণু তৈরি করে ইঁদুরশাবকের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত গবেষণাটি করেছেন কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয় ও ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক কাতসুহিকো হায়াশি।

গবেষণাপত্রের পাশাপাশি ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির স্টেম সেল ও প্রজননবিশেষজ্ঞ ডায়ানা লেয়ার্ড এবং তাঁর সহকর্মী জোনাথন বায়ের্লের একটি মন্তব্যও প্রকাশিত হয়েছে। তাঁদের মতে, গবেষণাটি ‘প্রজনন গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে’।

এ গবেষণার মাধ্যমে ভবিষ্যতে হুমকির মুখে থাকা স্তন্যপায়ী প্রজাতিগুলোর একক পুরুষ প্রাণী থেকে সন্তান জন্মদান সম্ভব হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন ডায়ানা লেয়ার্ড ও জোনাথন বায়ের্ল। তাঁরা বলেন, ‘সমকামীদের ক্ষেত্রে অন্যের ডিম্বাণু ব্যবহারের নৈতিক ও আইনি সংকট এড়িয়ে নিজেদের সন্তান জন্মদানের সুযোগও তৈরি করছে এই গবেষণা।’

অধ্যাপক কাতসুহিকো হায়াশি অবশ্য বলছেন, এ গবেষণা এখনো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। গত সপ্তাহে লন্ডনের ক্রিক ইনস্টিটিউটে জিন এডিটিং সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ইঁদুর এবং মানুষের মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে।’

দীর্ঘদিনের গবেষণা

২০১৮ সালে চীনের একটি গবেষণায় দুই নারী ইঁদুর থেকে সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু পুরুষ ইঁদুর থেকে সন্তান জন্ম দিতে পারলেও সেগুলোকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। জাপানের বিজ্ঞানীরা তাঁদের গবেষণায় একটু ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁদের গবেষণায় পুরুষ ইঁদুর থেকে জন্ম দেওয়া সন্তান স্বাভাবিকভাবে বড় হয়েছে এবং নিজেরাও সন্তান জন্ম দিয়েছে।

এই পদ্ধতিতে প্রথমে পুরুষ ইঁদুরের লেজ থেকে একটি কোষ নেওয়া হয়েছে। সেই কোষকে স্টেম সেলে রূপ দেওয়া হয়েছে। এরপর পুরুষ ইঁদুরের স্টেম সেলকে নারী কোষে এবং নারী কোষ থেকে সেটিকে ডিম্বাণুতে রূপান্তর করা হয়েছে। পরে সেই ডিম্বাণু নিষিক্ত করে একটি নারী ইঁদুরের গর্ভে স্থাপন করা হয়েছে।

মানুষের ওপর গবেষণা এখনো অনেক দূর

গবেষণাটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা এখনো পর্যাপ্ত নয়। গবেষণায় ৬৩০টি ভ্রূণ নারী ইঁদুরের গর্ভে স্থাপন করা হলেও কেবল সাতটি থেকেই সন্তান জন্ম দেওয়া গেছে।

কেন এত অল্পসংখ্যক ভ্রূণ বাঁচল, সেটি এখনো গবেষকেরা নিশ্চিত হতে পারেননি। মানুষের স্টেম সেলে কীভাবে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে, সেটিও নিশ্চিত নন তাঁরা। জিনের পরিবর্তন ঘটানোর প্রক্রিয়ায় ভুল বা অন্য কোনো কারণে যেসব জটিলতা তৈরি হতে পারে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীদের সতর্ক থাকার ওপর জোর দিয়েছেন ডায়ানা লেয়ার্ড।