জাতিসংঘ-তালেবান বৈঠকে কেন জায়গা পাননি নারীরা
কাতারের রাজধানী দোহায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসনের প্রতিনিধিদের বৈঠককে ফলপ্রসূ বলছেন কূটনীতিকেরা। বৈঠকে আফগান প্রতিনিধিদলে কোনো নারী ছিলেন না। এ নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন সমালোচনা করেছে।
বৈঠকে নারীদের আমন্ত্রণ না জানানোর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন বিবিসির সাংবাদিক ক্যারোলিন ডেভিস।
গত রোববার থেকে দুই দিনের ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমা সমর্থিত আশরাফ গনি সরকারকে তিন বছর আগে হটিয়ে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসে তালেবান। তবে এ পর্যন্ত কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান প্রশাসনকে স্বীকৃতি দেয়নি। অবশ্য এই প্রথম সরাসরি তালেবান সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা তালেবানের সঙ্গে দুদিনের বৈঠক শেষে গতকাল মঙ্গলবার আফগান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা করে সাক্ষাৎ করেছেন।
জাতিসংঘের উদ্যোগে ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। তালেবান সরকারের পীড়াপীড়িতেই আফগান নাগরিক সমাজের কোনো প্রতিনিধিকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন ক্যারোলিন ডেভিস। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা তালেবানের সঙ্গে বৈঠক শেষে গতকাল আফগান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা করে সাক্ষাৎ করেছেন।
তালেবানের সঙ্গে বৈঠকের পর বড় কোনো ঘোষণা আসেনি, বড় কোনো সাফল্য নেই, নেই কোনো সমাধানও। যদিও আয়োজক বা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ তেমন কিছু আশাও করেননি। বৈঠকে তালেবান কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের শান্ত থাকতে দেখা গেছে এবং তাঁদের মধ্যকার আলোচনা আপাত–ইতিবাচক বলে মনে হয়েছে।
বৈঠক নিয়ে ক্যারোলিন ডেভিস একাধিক কূটনীতিকের সঙ্গে কথা বলেছেন। বৈঠকে পরস্পরের মধ্যে ‘সম্মান দিয়ে’, ‘যৌক্তিক’ ও ‘খোলাখুলি’ আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।
‘আমরা যখন আরও সামনে অগ্রসর হব, তখন দেখব তারা (আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) কী চায় এবং শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে আমরা কী করতে পারি। এ আইনের বাইরে গিয়ে কিছু নিয়ে আমরা আলোচনা করব না। শরিয়াহর মধ্যে থেকে আমরা সমস্যার সমাধান করব। এ প্রক্রিয়া চলবে। আমরা দেখতে চাই, এটা আমাদের কোথায় নিয়ে যায় এবং আমাদের কতটা উন্নতি হয়।’
তালেবান সরকারের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন তাদের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। ক্যারোলিন ডেভিস তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, বৈঠকের পর তালেবান সরকার কী কী পদক্ষেপ নিতে চলেছে?
জবাবে জাবিউল্লাহ বলেন, ‘আমরা যখন আরও সামনে অগ্রসর হব, তখন দেখব তারা (আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়) কী চায় এবং শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে আমরা কী করতে পারি। এ আইনের বাইরে গিয়ে কিছু নিয়ে আমরা আলোচনা করব না। শরিয়াহর মধ্যে থেকে আমরা সমস্যার সমাধান করব। এ প্রক্রিয়া চলবে। আমরা দেখতে চাই, এটা আমাদের কোথায় নিয়ে যায় এবং আমাদের কতটা উন্নতি হয়।’
বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও ব্যক্তি খাতের নানা বিষয় ছিল। সেখানে মানবাধিকার ও নারীর ভূমিকার মতো বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তালেবান এখনো তাদের অনড় মনোভাবের কথাই বলছে। জাবিউল্লাহ বলেন, ‘আমরা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই না। আমরা দেশেই এসবের একটি সমাধান খুঁজে বের করব।’
ক্ষমতা দখলের পর প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো নানা বিষয়ে কেন কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি, বিবিসির এমন প্রশ্নের উত্তরে তালেবানের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলো অবজ্ঞা করছি না। এগুলো নিয়ে কাজ করছি। আমরা শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে এসবের একটা সমাধান খুঁজছি।’
আফগানিস্তানে মেয়েরা মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়া করতে পারে না। তারা পার্ক অথবা ব্যায়ামাগারে যেতে পারে না। নারীদের কর্মক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার তালিকাও বাড়ছে।
নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনায় জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া রোজমেরি ডিকার্লো বলেন, ‘আমরা তাদের পরিষ্কারভাবেই বলেছি, এটা শুধু তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়।’
দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তালেবান এখনো তাদের অনড় মনোভাবের কথাই বলছে। জাবিউল্লাহ বলেছেন, তাঁরা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান না। তাঁরা দেশেই এসবের একটি সমাধান খুঁজে বের করবেন।
২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে আবার শাসনক্ষমতায় আসে তালেবান। এর আগে দেশটিতে যে সরকার ছিল, তাদের সঙ্গে জাতিসংঘের বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। সেগুলোর কথা উল্লেখ করে ডিকার্লো বলেন, যদি সরকারের পরিবর্তনও হয়, তাতে কিছু আসে–যায় না। চুক্তি বহাল থাকবে।
আফগানিস্তান–বিষয়ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশেষ দূত টমাস নিকলেসন বিবিসিকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, তারা এ ধরনের (নারী অধিকার) কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু তারা এখনই নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে প্রস্তুত নয়। নারী অধিকার নিয়ে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে বলে আমি আশাবাদী। তবে সেটা ঠিক কত দিনে হবে, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।’