তাইওয়ানের মাছ ধরার নৌকা জব্দ করেছে চীন

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কুইমোয়ের কাছে তাইওয়ানের কোস্টগার্ডের ধাওয়া খেয়ে চীনের জেলেদের বহনকারী একটি স্পিডবোট পালাতে গিয়ে উল্টে যায় এবং দুই জেলে ডুবে মারা যান। তাইওয়ান কোস্টগার্ডের ফাইল ছবি

তাইওয়ানের একটি মাছ ধরার নৌকা অবৈধভাবে চীনের জলসীমায় প্রবেশ করলে চীনা কোস্টগার্ড নৌকাটিকে জব্দ করেছে। আটক করেছে সেটির পাঁচ ক্রুকেও। ক্রুদের মধ্যে দুজন তাইওয়ান এবং তিনজন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক।

গত মঙ্গলবার রাতে নৌকাটি জব্দ করা হয়। তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ চীনকে তাদের নৌকা এবং সেটির ক্রুদের ছেড়ে দিতে বলেছে। চীনের দক্ষিণপূর্বের বন্দর উইতোতে তাইওয়ানের নৌকাটি আটকে রাখা হয়েছে।

তাইওয়ানের মাছ ধরার নৌকাটি চীনের জলসীমায় ছিল বলে বিবিসিকে জানিয়েছে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সেটি এমন সময় মাছ ধরতে চীনের জলসীমায় প্রবেশ করেছিল, যখন চীনে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। চীনে মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে।

এ বিষয়ে চীনা কোস্টগার্ডের মুখপাত্র লিউ দেজান বলেছেন, ‘নৌযানটি মাছ ধরার ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন করছে...সেইসঙ্গে নৌযানটি প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষিত এলাকায় প্রবেশ করেছে।’

তাইওয়ানের নৌযানটি মাছ ধরতে অবৈধ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছিল বলেও জানিয়েছেন লিউ দেজান। বলেন, তারা ‘সমুদ্র মৎস সম্পদের ক্ষতি করছিল’।

চীন ও তাইওয়ানকে বিভক্ত করা ১১০ মাইল দীর্ঘ প্রণালিতে নিয়মিতই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও চীন এখনো দ্বীপরাষ্ট্রটিকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অংশ বলে মনে করে। যারা একদিন পুনরায় চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একত্রিত হবে। তাইওয়ানের সঙ্গে তাইওয়ান প্রাণালিকেও চীন নিজেদের অর্থনৈতিক অঞ্চলভুক্ত বলে মনে করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাইওয়ানের ওপর চীনের সামরিক চাপ অনেক বেড়ে গেছে।

তাইপের কাছে থাকা তথ্যানুযায়ী, চীন ২০০৩ সাল থেকে সমুদ্রে নিজেদের গ্রীষ্মকালীন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের জলসীমায় প্রবেশ করায় তাইওয়ানের ১৭টি নৌযান জব্দ করেছে। তাইওয়ানও এ বছর তাদের জলসীমা থেকে চীনের পাঁচটি এ ধরনের নৌযান জব্দ করেছে।

তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ জানায়, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত আটটার দিকে (জিএমটি ১২টা নাগাদ) জব্দ হওয়া নৌযানটির ক্যাপটেন তাদের সতর্ক করে জানান, চীনা কোস্টগার্ডের দুটি নৌযানের কর্মকর্তারা তাঁদের নৌযানে উঠে এসেছেন এবং তাঁর নৌযানটি জব্দ করেছেন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জব্দ হওয়া নৌযানটির মালিক বলেন, ‘ওই সময়ে সমুদ্র ৪০ থেকে ৫০টি মাছ ধরার নৌকা ছিল। আমি জানি না কেন তারা আমার নৌকাটি লক্ষ্যবস্তু বানাল। এটা আগে কখনো এমন হয়নি...অতীতে যদি আপনি তাঁদের খুব কাছে চলে যেতেন তবে তাঁরা শুধু আপনাকে ধাওয়া দিয়ে দূর করে দিত।’

বেইজিং এবং তাইওয়ান সাধারণত পরস্পরের মাছ ধরার নৌযানের প্রতি নমনীয় মনোভাব দেখাত। বিশেষ করে তাইওয়ানের দূরবর্তী দ্বীপগুলোর আশপাশের সমুদ্রে। সেগুলো চীনা উপকূলের খুবই কাছে অবস্থিত।

কিন্তু সম্প্রতি তাইওয়ান তাদের সমুদ্রসীমায় পাহারা জোরদার করেছে। তাদের অভিযোগ, চীনের উপকূলবর্তী ফুজিয়ান প্রদেশ থেকে প্রচুর মাছ ধরার নৌকা তাদের জলসীমায় আসছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে চীনের একটি মাছধারা নৌযান তাইওয়ানের কোস্টগার্ডের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেটি উল্টে গিয়ে দুই চীনা জেলে ডুবে মারা যান। তার পর থেকে চীনের কোস্টগার্ড তাইওয়ানের দূরবর্তী দ্বীপগুলোর আশপাশে তাদের পাহারা আরও জোরদার করেছে।