মহিষের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা

সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় একটি মহিষছবি: এপি

থাইল্যান্ডের চোনবুরি শহরে প্রতিবছর কৃষি মৌসুমের শুরুতেই জমে ওঠে মহিষকেন্দ্রিক ঐতিহ্যবাহী উত্সব। একসময় লাঙল টানা ও গাড়ি টানার জন্য মহিষের বিশেষ পরিচিতি ও চাহিদা ছিল। এখন সেই প্রাণীই গয়নায় সাজে, মডেল হয়ে র‌্যাম্পে হাঁটে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। চোনবুরি শহরের স্থানীয় লোকজন মনে করেন, মহিষ এখন শুধু কৃষিজ প্রাণী নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী উৎসবের প্রাণ।

প্রতিবছর ১১তম চান্দ্রমাসের শেষে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যা থাই কৃষি মৌসুমের সূচনালগ্নের সঙ্গে মিলিয়ে আয়োজিত হয়। চলতি বছরের ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উৎসবে অংশ নিয়েছে পাঁচ বছরের ‘টড’। চকচকে কালো গায়ের মধ্যে উজ্জ্বল লালচে কান যেন তাকে আলাদা করে তুলেছে। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে টডের মালিক থাওয়াচাই ড্যাং-ঙাম হাসিমুখে বলেন, ‘এটা শুধু আমার শখ। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াতেই আনন্দ। দেখি টড কেমন করে।’

প্রতিবছর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়। ছাত্রছাত্রীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, ফুলে সাজানো রথ এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা নারী-পুরুষ—সব মিলিয়ে আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। মহিষের মাথায় মুকুট, গায়ে ফুলের মালা, রঙিন সাজসজ্জা উৎসবকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত। এরপর মাঠ মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, যেখানে মহিষদৌড় ও সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিযোগিতায় বিজয়ী মহিষের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালে একটি অ্যালবিনো মহিষ বিক্রি হয়েছিল ১৮ মিলিয়ন বাথে (৬ লাখ ৭২ হাজার ডলার)। থাইল্যান্ডে মহিষের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা নতুন শিল্প ও পেশার জন্ম দিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে সরকার ‘থাই বাফেলো কনজারভেশন ডে’ ঘোষণা করেছে, কৃষকদের প্রজনন সহায়তা দিচ্ছে এবং মহিষ পালনের প্রতি আগ্রহ বাড়াচ্ছে।

বড় খামারের মহিষগুলো প্রতিদিন পানিতে নামে, সাঁতার কাটে। তাদের ভুট্টা, সয়াবিন খাওয়ানো হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারকেরা শিংয়ের আকার, খুরের মসৃণতা, পায়ের গঠন এবং দেহের সুষম গড়ন দেখে বিচার করেন।

স্থানীয় কর্মকর্তা পাপাদা স্রিসোফন বলেন, এই প্রতিযোগিতার কারণে কৃষকেরা মহিষ পালে। না হলে আর মহিষ পালনে কেউ আগ্রহ দেখাত না।

টডের মালিক থাওয়াচাই বলেন, মানুষ যেমন মহিষ লালন-পালন করে, মহিষও তেমনি মানুষকে লালন-পালন করে।