পাম তেল কিনলেই ওরাংওটাং উপহার দেবে মালয়েশিয়া

কুয়ালালামপুরের একটি চিড়িয়াখানায় থাকা ওরাংওটাং।
ছবি : রয়টার্স

যেসব দেশ পাম তেল কিনবে, তাদের ওরাংওটাং উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে মালয়েশিয়া। একে দেশটির পক্ষ থেকে ‘ওরাংওটাং কূটনীতি’ বলা হচ্ছে। পাম তেলের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ কমাতে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাম তেল উৎপাদনকারী দেশ মালয়েশিয়া। পিৎজা থেকে শুরু করে বিস্কুট, লিপস্টিক, শ্যাম্পুসহ বাজারে যেসব প্যাকেটজাত খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য পাওয়া যায়, তার অর্ধেকের বেশি পণ্যে এই তেল ব্যবহার করা হয়। বিশ্বে পাম তেলের চাহিদার কারণে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বনভূমি উজাড় হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।

মালয়েশিয়ার বৃক্ষরোপণ ও পণ্যমন্ত্রী জোহারি আবদুল গনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, তাঁর দেশ পাম তেলের ক্ষেত্রে কোনো রক্ষণাত্মক পদ্ধতিতে যাবে না। এর পরিবর্তে বিশ্বকে দেখাবে, মালয়েশিয়া পাম তেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে টেকসই প্রক্রিয়া নিয়েছে এবং বনভূমি ও পরিবেশ রক্ষায় টেকসই পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

জোহারি আবদুল গনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আছে যাদের, যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশ, চীন ও ভারতকে ওরাংওটাং উপহার দিয়ে মালয়েশিয়া তাদের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতির বিষয়টি প্রমাণ করবে। তিনি এ উদ্যোগকে চীনের ‘পান্ডা কূটনীতির’ সঙ্গে তুলনা করেন। চীনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি ঠিক রাখতে পান্ডা উপহার দেওয়া হয়। এ ছাড়া চীন সাধারণত বিভিন্ন দেশের চিড়িয়াখানাগুলোতে ১ বছরের জন্য ১ জোড়া পান্ডা ১০ লাখ মার্কিন ডলারে ভাড়া দেয়। এ অর্থ বন্য প্রাণী সংরক্ষণে খরচ করে তারা। এক বছর পর পান্ডা আবার ফেরত নেয় চীন।

মালয়েশিয়ার এই মন্ত্রী পাম তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলে দেশটির বণ্য প্রাণী রক্ষায় কারিগরি দক্ষতা বাড়ানোর দিকে জোর দিতে আহ্বান জানান।

মালয়েশিয়া বর্তমানে বনভূমি উজাড়ের সঙ্গে জড়িত পণ্য রপ্তানিতে ইইউয়ের চাপে রয়েছে। গত বছর ইইউয়ের পক্ষ থেকে বন উজাড়ে জড়িত পণ্যগুলো আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে এ আইনকে বৈষম্যমূলক অ্যাখ্যা দিয়ে এর সমালোচনা করা হয়।

মালয়েশিয়ার বর্নেও দ্বীপের বর্নিয়ান ওরাংওটাংকে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের পক্ষ থেকে চরম বিপণ্ন প্রাণীর তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, ১০০ বছর আগে বর্নেওতে ২ লাখ ৩০ হাজার ওরাংওটাং ছিল। কিন্তু এখন তা কমে ১ লাখ ৪ হাজার ৭০০–তে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে সাড়ে সাত হাজার সুমাত্রান ওরাংটাং বাস করছে।

তবে মালয়েশিয়ায় ওরাংওটাং কূটনীতির সমালোচনা করেছে বন্য প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করা সংস্থাগুলো। তাদের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে অন্য কোনো উপায়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষার কথা ভাবতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন