আইএসকের হামলা এটাই প্রথম নয়

দেশ ছাড়তে শিশুদের নিয়ে আফগান নারীরা ছুটছেন হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের মূল ফটকে। শনিবার কাবুলে
ছবি: এএফপি

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসকের রক্তক্ষয়ী বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত ১৯০ জনের মতো প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মার্কিন সেনারাও। কিন্তু দেশটিতে এ গোষ্ঠীর এটিই প্রথম হামলা নয়, আগেও তাদের একাধিক হামলায় অনেক মানুষ হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। খবর আল-জাজিরা, বিবিসি ও এনপিআর ডটকমের।

আইএসকের (আইএসের একটি শাখা) পুরো নাম ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রভিন্স। আফগানিস্তানের বাইরে পাকিস্তানেও সক্রিয় এর সদস্যরা। আইএসকের সদস্যদের ধারণা, তালেবান যথেষ্ট শক্তিশালী নয় বা তাদের ‘তথাকথিত আদর্শ’ বাস্তবায়নে যথেষ্ট কঠোর নয় তালেবান। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আইএসকে যাত্রা শুরু করে। সেই সময় তাদের তৎপরতা ছিল সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। কারণ, এর আগে ২০১৪ সালে সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন এলাকা দখল করে তথাকথিত ‘খেলাফত’ ঘোষণা করে আইএস।

যাত্রা শুরুর পর আইএসকে বা আইএসকেপির সবচেয়ে কট্টরপন্থী সদস্যদের কেউ কেউ আফগানিস্তান থেকে আইএসের পক্ষে লড়াই করতে ইরাক ও সিরিয়ায় যান। পরিকল্পনা করতে থাকেন পশ্চিমা দেশগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর।

আইএসকের সদস্য ঠিক কতজন, তা পরিষ্কার না হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ভয়াবহ কিছু হামলার জন্য দায়ী তারা। এই সময়ে মসজিদ থেকে শুরু করে জনসমাগমের স্থান, এমনকি হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে এ গোষ্ঠী। আফগানিস্তানে যেসব জঙ্গিগোষ্ঠী এখন সক্রিয়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস এই আইএসকে।

—২০১৫ সালের জানুয়ারিতে আইএসকে যাত্রা শুরু করে। আফগানিস্তানে যেসব জঙ্গিগোষ্ঠী এখনো সক্রিয়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস এই গোষ্ঠী। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আইএসের শাখা বা সহযোগী সংগঠনগুলো আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ১০০ হামলা চালিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবারের সাম্প্রতিকতম বোমা হামলার বাইরে আইএসকের উল্লেখযোগ্য হামলার মধ্যে রয়েছে কাবুলে গত বছরের মে মাসে একটি মাতৃসদনে হামলা। ওই হামলায় নারী, শিশুসহ ২৪ জন নিহত হয়। একই বছরের নভেম্বরে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালানোর দায় স্বীকার করে তারা। তাতে মারা যান অন্তত ২২ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। গত মে মাসে কাবুলে মেয়েদের একটি স্কুলেও হামলা চালিয়েছিল আইএসকে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অনুমান, তারা বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে আইএসের শাখা বা সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রায় ৭৫ শতাংশ সদস্যকে হত্যা করেছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতাও।

দ্য সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিসের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সাল পর্যন্ত এসব শাখা বা সহযোগী সংগঠন আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ১০০টি হামলা চালিয়েছে। এই সময়ে মার্কিন ও আফগান বা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তাদের লড়াই হয়েছে কয়েক শ।

—আইএসকে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা বা যোগাযোগের বিরোধী। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তিরও বিরোধিতা করেছে তারা।

কাবুল বিমানবন্দরে হামলার ঘটনার পর পেন্টাগনে এক ব্রিফিংয়ে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান কেনেথ ম্যাককেঞ্জি বলেন, আফগানিস্তানে আইএসের হামলার হুমকি প্রকৃতপক্ষেই বাস্তব। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মতে, তাঁদের হামলা তালেবানের সক্ষমতার ফাঁকফোকর তুলে ধরতে পারে।

জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা

তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তারা কোন পথে এগোবে, সেদিকে চোখ রাখছে বিভিন্ন জিহাদি গোষ্ঠী। তালেবান শরিয়াহ আইন দিয়ে পরিচালিত ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে কি না বা করলে সেই রাষ্ট্র কতটা প্রকৃত ও কঠোর হবে, তা দেখার অপেক্ষা করছে তারা। এরই মধ্যে আইএস বাদে আল-কায়েদাসহ অন্য সংগঠনগুলো তালেবানের বিজয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে।

দুই দশক ধরে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর অভিযানে কোণঠাসা হয়ে থাকা তালেবান মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিমাসমর্থিত আফগান বাহিনীকে হারিয়ে পুরো দেশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি অনেকের কাছে পৌরাণিক কাহিনি মনে হচ্ছে। তারপরও এ নিয়ে জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভিন্নমত দেখা যাচ্ছে।

তালেবানের কিছু পররাষ্ট্রনীতি আল-কায়েদার সমর্থনকারী কট্টরপন্থীরা চান না। আফগানিস্তানে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের বিষয়টিও পছন্দ করছেন না তাঁরা। অন্যদিকে তালেবানের প্রতিদ্বন্দ্বী আইএসকে আফগানিস্তানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ক্ষুব্ধ করেছে। বিশ্লেষকেরা বলেন, তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যেকোনো সহযোগিতা বা যোগাযোগের বিরোধী আইএসকে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তিরও বিরোধিতা করেছে তারা।

আবার সিরিয়াভিত্তিক এইচটিএস ও আল-কায়েদার সমর্থকদের মধ্যেও তালেবানের কাবুল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিবাদ হচ্ছে। আল-কায়েদা মনে করে, এইচটিএস বিক্রি হয়ে গেছে। এইচটিএস সমর্থকেরা আল-কায়েদাকে দুমুখো নীতিসম্পন্ন বলে ভর্ৎসনা করছে। পক্ষান্তরে তালেবানের রাজনৈতিক পদক্ষেপের প্রশংসা করছে তারা।