আঞ্চলিক শক্তির চাপে মিয়ানমারের জান্তা

মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। আজ ইয়াঙ্গুনে
ছবি: রয়টার্স

নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলকারী মিয়ানমারের জান্তা সরকার পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক শক্তিরও চাপের মুখে রয়েছে। অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী হামলার পর দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর পক্ষ থেকে কড়া ভাষায় নিন্দা জানানো হয়েছে, যা সচরাচর দেখা যায় না। মিয়ানমার–সংকট সমাধানে আলোচনা করতে আজ মঙ্গলবার বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে আজও দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কালেতে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়েছে। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন তিনজন।

মিয়ানমারের এই সংকট সমাধানে জান্তা সরকারের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের জোট আসিয়ান। জোটটির সদস্য মিয়ানমারও।

আসিয়ানের একটি সূত্র বলেছে, আজ বিকেল চারটায় বৈঠকটি শুরু হওয়ার কথা। বৈঠকে মিয়ানমারের জনগণের ওপর হামলা ও সহিংসতা বন্ধে সেনাবাহিনীকে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কূটনীতিক এএফপিকে বলেছেন, ‘সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিসহ সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপে বসতে সেনাবাহিনীকে বলা হবে।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। গ্রেপ্তার করা হয় স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে। অভ্যুত্থানের পর থেকে এর বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ করে আসছেন হাজার হাজার মানুষ। অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে গত রোববার ছিল সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন। জাতিসংঘ বলেছে, শহরগুলোতে বিক্ষোভের সময় সেনা ও পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৮ জন প্রাণ হারান। এ পর্যন্ত বিক্ষোভে নিহত হয়েছেন ২১ জন। আটক করা হয়েছে এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে।

বিক্ষোভস্থলে আগুন নেভাতে দেখা যায় একজন বিক্ষোভকারীকে। আজ ইয়াঙ্গুনে
ছবি: এএফপি

আসিয়ানের দেশগুলোর মধ্যে কোনো সংকট দেখা দিলে সদস্যদেশগুলো কোনো পদক্ষেপ নেয় না। নিষ্ক্রিয়তার এই নীতির কারণে জোটটি দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনার শিকার হচ্ছে। তবে জোটের কিছু প্রভাবশালী দেশ সম্প্রতি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। তাদের মধ্যে একটি সিঙ্গাপুর। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান গত সোমবার পার্লামেন্টকে বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকের বিরুদ্ধে মারণাস্ত্র ব্যবহারে আমরা হতবাক। আমরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাই।’ মিয়ানমারকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনার জন্যও সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পুলিশের জলকামান থেকে বাঁচতে মানুষ নানা ধরনের ঢাল ব্যবহার করেন। আজ কালে শহরে
ছবি: এএফপি

এদিকে আজ বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লং মিয়ানমারের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এগিয়ে নিতে সু চিকে মুক্তি দিতে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে সেনাবাহিনীর চেয়ে সাধারণ জনগণই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশ সিঙ্গাপুর। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বিবৃতি মিয়ানমারের জেনারেলদের ওপর চাপ প্রয়োগ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

আসিয়ানের সবচেয়ে বড় দেশ ইন্দোনেশিয়াও জেনারেলদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে। মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। একই সঙ্গে মিয়ানমারের সংকট সমাধানে সম্প্রতি ব্যাংককে জান্তা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।