আফগানিস্তান নিয়ে চীন ও পাকিস্তানের পরিকল্পনা প্রকাশ
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার, আফগান সেনাদের কোণঠাসা অবস্থা, তালেবানের অগ্রযাত্রা—এমন এক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশটি নিয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ভিত্তিতে ও একত্রে কাজ করবে চীন ও পাকিস্তান। দেশ দুটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এ কথা জানিয়ে আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ‘চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (সিপিইসি)’ প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব দিয়েছেন।
দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের চেংদু শহরে বেইজিং ও ইসলামাবাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত তৃতীয় কৌশলগত সংলাপে গত শনিবার দুদেশ আফগানিস্তান নিয়ে তাদের পাঁচ কর্মপরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি এ যৌথ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।
ওয়াং ই আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ বলে উল্লেখ করে দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তড়িঘড়ি সব সেনা সরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে কথিত সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই চালালেও তার উদ্দেশ্য সফল হয়নি। আবার দেশটিতে শান্তিও ফেরেনি, বরং সেখানে নিরাপত্তাজনিত এক নতুন কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টি হয়েছে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়ায় দেশটির পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে চীন ও পাকিস্তান। দেশটিতে যে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সূচনা দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বেইজিং ও ইসলামাবাদের মধ্যে জোরালো সহযোগিতার প্রয়োজন। কৌশলগত সংলাপে যেসব বিষয়ের ওপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, এটি তার একটি বলে জানান তিনি।
যে পাঁচটি ক্ষেত্রে চীন ও পাকিস্তান যৌথভাবে কাজ করবে সেই বিষয় তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং। পাঁচ কর্মপরিকল্পনার প্রথমটি হলো আফগানিস্তানে লড়াই ছড়িয়ে পড়া এড়ানো ও দেশটিকে পুরোদমে গৃহযুদ্ধের মুখে পড়া থেকে রক্ষার বিষয় তাৎক্ষণিকভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া। দ্বিতীয়, কাবুল-তালেবান আন্তসমঝোতা ত্বরান্বিত করার ওপর মনোযোগ দেওয়া এবং আফগানিস্তানে বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।
তৃতীয় কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে ওয়াং বলেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই করা। কেননা চীন মনে করে, আফগানিস্তান অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে তার ধাক্কা জিনজিয়াং প্রদেশে গিয়েও লাগবে। উল্লেখ্য, প্রদেশটিতে লাখ লাখ সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে।
চতুর্থ, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার করা ও পঞ্চম, দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার লক্ষ্যে একটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা।
আফগানিস্তান নিয়ে চীন ও পাকিস্তান একজোট হয়ে কাজ করার ঘোষণা দিলেও সন্ত্রাসবাদ ইস্যু এবং আফগানিস্তানে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর ভূমিকা নিয়ে দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গিতে দৃশ্যত বিস্তর ফারাক রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। চলতি মাসের শুরুর দিকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হানিফ আতমারের সঙ্গে দুশানবেতে এক বৈঠকে বলেছিলেন যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তালেবানের পরিষ্কার অবস্থান নেওয়া উচিত।
আবার আঞ্চলিক যোগাযোগ নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি প্রকাশ্যে পাকিস্তানের সমালোচনা করেন। পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ‘বিদেশি সন্ত্রাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায়’ দেশটির সমালোচনা করেন তিনি।
যাহোক, চীন-পাকিস্তান তৃতীয় কৌশলগত সংলাপ শেষে উভয় দেশ একটি যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করে। তাতে আফগানিস্তানের নেতৃত্বে যেকোনো শান্তি ও পুনর্গঠনমূলক প্রক্রিয়াকে গতিশীল করা, তাতে সমর্থন দান ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে তাঁর দেশের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লায়োড অস্টিন শনিবার বলেছেন, তালেবানের কাছে হারানো এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করার আগে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রথম কাজ হবে তাদের অগ্রযাত্রাকে টেনে ধরা। তালেবান যোদ্ধারা একে একে বিভিন্ন এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে থাকার প্রেক্ষাপটে আফগান সরকার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সেনাদের পুঞ্জীভূত করার পরিকল্পনা করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অস্টিন এ মন্তব্য করলেন।