আফগানিস্তানে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার চায় ৫ বিশ্বশক্তি

অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে তালেবানকে চাপে রাখতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের গত বুধবারের বৈঠকের আলোকে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য দেশের বৈঠক। গতকাল জাতিসংঘের সদর দপ্তরে।ছবি: এএফপি

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য আফগানিস্তানে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে চাপ প্রয়োগ নিয়ে একমত হয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশটিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গড়তে তালেবানকে পাঁচ শক্তির পক্ষ থেকেই চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

এর আগে গত মাসে চীন ও রাশিয়া বলেছে, আফগানিস্তানে তালেবানের জয় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পরাজয়। আর চীন ও রাশিয়া তালেবানের সঙ্গে কাজ করার পদক্ষেপও গ্রহণ করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো রাষ্ট্র তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের সময় নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের বৈঠকের পর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, নিরাপত্তা কাউন্সিলের শক্তিগুলোর সবাই চায়, একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তান, যেখানে মানবিক সাহায্য কোনো রকম সমস্যা বা বৈষম্য ছাড়া বিতরণ করা যাবে।

গুতেরেস আরও বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেশগুলো আরও চায় এমন একটি আফগানিস্তান, যেখানে নারী ও মেয়েশিশুদের অধিকারকে সম্মান দেখানো হবে। এমন একটি আফগানিস্তান, যেটি সন্ত্রাসের আখড়া হবে না। এমন আফগানিস্তান, যেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার থাকবে, যাতে সব ধরনের মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সরাসরি বৈঠক করেন। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা ওই বৈঠকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসের ডাকা এই বৈঠককে ‘গঠনমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা। এ ছাড়া তালেবান সরকার আফগানিস্তানে নারীদের অধিকারকে সম্মান জানাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রীরা।

মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি মনে করি, তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন নিয়ে কেউ সন্তুষ্ট নয়, এমনকি চীনও নয়।’

বৈঠকের আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুন বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের সবাই একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার চাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

জুন বলেন, সবখানেই একতা রয়েছে।

এর আগে আফগানিস্তানের কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্তরাষ্ট্র স্থগিত করে দেওয়ার সমালোচনা করেছিল চীন। তবে আফগানিস্তান যেন সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য না হয়ে ওঠে, সে বিষয়েও সতর্ক করে বেইজিং।

এদিকে আফগানিস্তান নিয়ে ২০টি দেশের প্রতিনিধিরা ভার্চ্যুয়াল আলোচনা করেন, যার সঙ্গে যুক্ত হয় কাতার। জি–২০ সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস তালেবান সরকার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এর আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে চিঠি দেয় তালেবান। গত সোমবার তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠি দিয়ে এই অনুরোধ জানিয়েছেন। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাতিসংঘের একটি কমিটি। তালেবান তাদের দোহাভিত্তিক মুখপাত্র সুহাইল শাহিনকে জাতিসংঘে আফগানিস্তানের দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু এর বিরোধিতা করেছেন মাস।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার ঘোষণা না দিয়ে তালেবানদের একটি কৌশলগত ভুল করেছে। এটি তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া আমাদের জন্য কঠিন করে তুলবে।’

মাস আরও বলেন, ‘এটা গুরুত্বপূর্ণ যে তারা আমাদের সবার কাছ থেকে এটা শুনেছে। তাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মৌলিক রাজনৈতিক পরিমিতিগুলো নিয়ে আমাদের একসুরে কথা বলা উচিত।’

তালেবান নেতাদের উদ্দেশে মাস বলেন, জাতিসংঘে শো করে কোনো উদ্দেশ্য সাধিত হবে না।