আফগানিস্তানে জাতীয় পরিচয়পত্রে এখন থেকে মায়ের নাম থাকবে

আফগানিস্তানে সন্তানের জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকবে মায়ের নামপ্রতীকী ছবি : রয়টার্স

আফগানিস্তানে সন্তানের জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের নাম লেখা থাকবে। নারীদের নাম প্রকাশ নিয়ে সামাজিক বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর পরে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আইনে স্বাক্ষর করেন। নারী অধিকারকর্মীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল এটি।আফগানিস্তানে প্রচলিত আইন অনুসারে জাতীয় পরিচয়পত্রে কেবল সন্তানের বাবার নাম থাকে।

আফগানিস্তানে জনসমক্ষে নারীর নাম প্রকাশ করা অবমাননাকর বলে বিবেচিত। চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রে নিজের নাম ব্যবহার করায় কয়েকজন নারীকে শাস্তি হিসেবে মারধরও করা হয়।

তিন বছর আগে এসবের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগ হোয়ারইজমাইনেম নামে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়। এতে বিখ্যাত ব্যক্তি ও পার্লামেন্টের সদস্যরা সমর্থন দেন। এই ক্যাম্পেইনে সন্তানের জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নামের পাশাপাশি মায়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়।

হ্যাশট্যাগ হোয়ারইজমাইনেমের প্রতিষ্ঠাতা লালেহ ওসমানি বিবিসিকে নিজের আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পেইনে লেগে থেকে অব্যাহত প্রচারের কারণেই যে বিজয় এসেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আফগান সরকারও নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সহকারীদের এই সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। নারী, পুরুষ যাঁরা আমাদের ক্যাম্পেইনে সমর্থন দিয়েছেন, আমাদের হয়ে আওয়াজ তুলেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই। সমঅধিকার পেতে কাজ করা সমর্থকদের অভিনন্দন জানাই।’
আফগান মন্ত্রিসভার আইনবিষয়ক কমিটি বলছে, পরিচয়পত্রে মায়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত লিঙ্গসমতার পথে বড় একধাপ অগ্রগতি।

‘ক্যাম্পেইনে লেগে থেকে অব্যাহত প্রচারের কারণেই যে বিজয় এসেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আফগান সরকারও নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সহকারীদের এই সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। নারী, পুরুষ যাঁরা আমাদের ক্যাম্পেইনে সমর্থন দিয়েছেন, আমাদের হয়ে আওয়াজ তুলেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই। সমঅধিকার পেতে কাজ করা সমর্থকদের অভিনন্দন জানাই।’
লালেহ ওসমানি, প্রতিষ্ঠাতা, হ্যাশট্যাগ হোয়ারইজমাইনেম

পার্লামেন্ট সদস্য মরিয়ম সামা কাবুল থেকে টুইটে আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের লড়াই সফল হলো।’
শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে আফগান সরকার ও তালেবানদের মধ্যে আলোচনা শুরুর চেষ্টা চলছে।

বিবিসির আফগান প্রতিনিধি মেহজুবা নওরোজি বলেন, আফগানিস্তানে মেয়েশিশুর জন্মগ্রহণের অনেক পরে তার নাম রাখা হয়। যখন একজন নারীর বিয়ে হয়, তখন আমন্ত্রণপত্রে তাঁর নাম থাকে না। যখন নারী অসুস্থ হয়, তখন চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রেও তাঁর নাম থাকে না। মৃত্যুর পরে নারীর নাম মৃত্যুসনদেও থাকে না।

জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের নাম রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েও সমালোচনা হয়েছে। রক্ষণশীলেরা বলছেন, পশ্চিমাদের পরিকল্পনা থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।