আবারও জরুরি অবস্থায় যেতে পারে জাপান

জাপানে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে
ছবি: রয়টার্স

ভালো গেল না জাপানের বছরের শেষ দিনটি। রাজধানী টোকিওতে এক দিনে নতুন শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা আগের সর্বোচ্চ সংখ্যার চেয়ে এক লাফে বেড়ে গেছে। এক দিনে করোনা শনাক্ত ৩০০ জনের বেশি বেড়ে ১ হাজার ৩৩৭ জনে দাঁড়িয়েছে। সারা দেশে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ফলে জাপানজুড়েই এখন করোনা নিয়ে শঙ্কা ও উদ্বেগ বেড়ে চলেছে।
বছরের এই সময়ে চাকরিজীবীদের অনেকে নিজেদের বাড়িতে ফিরে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটান। কিন্তু করোনা সংকটে তাঁদের ঘরবন্দী জীবন কাটছে। বয়স্করা করোনায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে টোকিও, ওসাকা ও নাগোইয়ার মতো বড় শহর থেকে মফস্বলগামী লোকজন কমেছে। তাই বিষণ্ন মনেই নববর্ষকে স্বাগত জানাচ্ছেন নগরবাসী।

জাপানে করোনাভাইরাস সামাল দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা এক টুইট বার্তায় বলেছেন, মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য সরকার আবার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে পারে।

মন্ত্রীর এই মন্তব্য প্রচারের পর থেকে অনেকেই মনে করছেন, জরুরি অবস্থা আসন্ন। এর আগে টোকিওর গভর্নর ইয়ুরিকো কোইকেও একই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তিনি রাজধানীতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

রাজধানী টোকিওর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ফলে সার্বিকভাবে বছরের শেষ দিনটিতে অনিশ্চিত এক অবস্থা দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ হঠাৎ করে বাড়ার ঘটনায় সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণের দোদুল্যমানতাকে দায়ী করছেন অনেকেই। অভিযোগ উঠেছে, অর্থনীতির ওপর মাত্রাতিরিক্ত অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে ভাইরাস সামাল দেওয়ার জন্য সময়মতো পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করেনি। এর মাশুল এখন জাপানকে দিতে হচ্ছে। এতে প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার প্রতি জনসমর্থনের হার কমছে।

করোনাভাইরাসের বিস্তার বন্ধ করার পাশাপাশি অর্থনীতির মোড় ঘোরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন সুগা। ক্ষমতা গ্রহণের পর অর্থনীতির দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে ভাইরাস সামাল দেওয়ার কাজটি সেভাবে প্রাধান্য দেয়নি সুগার সরকার। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার আদেশ দিতেও দ্বিধাবোধ করছে জাপান সরকার।

জাপানের প্রভাবশালী অর্থনীতিবিষয়ক দৈনিক নিক্কেই শিম্বুনের সোমবার প্রকাশিত এক জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, সুগার সরকারের প্রতি সমর্থনের হার প্রথম দিককার দিনগুলো থেকে ৩০ শতাংশ কমে এখন ৪২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে সমর্থনের হার ছিল ৭৪ শতাংশ। এত অল্প সময়ে জনসমর্থনে এ রকম ধস নামার ঘটনা জাপানে এর আগে খুব বেশি দেখা যায়নি। ফলে সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনেকে এখন সন্দেহপ্রবণ হতে শুরু করেছেন।

অর্থনীতিকে সতেজ করে তোলার ভাবনা থেকে দেশজুড়ে ছাড়কৃত মূল্যে ভ্রমণের যে কর্মসূচি সুগার প্রশাসন চালু করেছিল, তার ফলাফল হয়েছে খুবই নেতিবাচক। সংকটকবলিত হোটেল, পর্যটন ও পরিবহন ব্যবসাকে এটা কিছুটা সাহায্য করলেও অর্ধেক মূল্যে ভ্রমণের এই সুযোগ গ্রহণ করে মানুষ দেশজুড়ে যাতায়াত শুরু করে। এতে ভাইরাস দেশের দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সরকার অবশ্য পরে এই কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছে।

স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়মাবলি মেনে চলার নানা রকম উপদেশ সুগার সরকার নিয়মিতভাবে জনগণকে দিয়ে গেছে। তবে উপদেশ মেনে চলার ক্ষেত্রে সরকারের ভেতরের মহল ব্যর্থ হয়েছে। এতে সুগার প্রতি আস্থা হারিয়েছে মানুষ। সুগা নিজেও একসময় এ জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।

করোনাভাইরাস নিয়ে কী করা দরকার, সে বিষয়ে প্রশাসন মনস্থির করতে পারেনি। এ ছাড়া আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। সংসদীয় জিজ্ঞাসাবাদে আবের উপস্থিত হয়ে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা সুগার অবস্থানকে দুর্বল করে দিয়েছে। আবের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তাঁকে দেখা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা তিনি বরাবর করে গেছেন।
তবে জনসমর্থন কমার বা আগের প্রশাসনের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা এ মুহূর্তে সরকারের পতন ঘটাবে না। নতুন বছরের শরৎকালে জাপানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তত দিন পর্যন্ত ক্ষমতায় ঝুলে থাকার চেষ্টা করে যাবেন সুগা। তবে দলের ভেতরে অসন্তোষ দেখা দিলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। সেটা অবশ্য অনেকটাই নির্ভর করবে বছরের শুরুতে করোনাভাইরাস সামাল দিতে তাঁর নেওয়া পদক্ষেপের ওপর।