আরও কঠোর জান্তা, সু চির বিরুদ্ধে নতুন দুটি অভিযোগ

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি
ছবি: এএফপি

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে আজ সোমবার দুটি নতুন ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে। একই দিন অজ্ঞাত স্থান থেকে আদালতের শুনানিতে অংশ নেন সু চি। আগের দিন নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১৮ বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর সু চির বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে দেখা গেল সামরিক জান্তা সরকারের।

মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। গ্রেপ্তার করা হয় স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে। সেই থেকে সু চিকে দেখা যাচ্ছিল না। তিনি কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন, সেই খোঁজও মিলছিল না।

মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের শুনানিতে যুক্ত হন সু চি। এ সময় তাঁকে ‘বেশ সুস্থই’ দেখাচ্ছিল। সু চি তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন। তবে সু চিকে কোথায় রাখা হয়েছে, সেটা পরিষ্কার নয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নেপিডোর একটি অজ্ঞাত স্থানে সু চিকে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

মিয়ানমারে পুলিশের গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল থেকে আত্মরক্ষায় এভাবেই নিজেদের তৈরি বর্ম ব্যবহার করছেন বিক্ষোভকারীরা। গতকাল ইয়াঙ্গুনে
ছবি: এএফপি

গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই সু চির (৭৫) বিরুদ্ধে লাইসেন্সবিহীন ওয়াকিটকি রাখা এবং গত বছর নির্বাচনী প্রচারণায় করোনাভাইরাস নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের অভিযোগে দুটি ফৌজদারি অভিযোগ আনে জান্তা। আদালতে সু চির পক্ষে লড়ছেন দেশটির প্রবীণ আইনজীবী খিন মং জাও। আজ রাজধানী নেপিডোতে সাংবাদিকদের জাও বলেন, ‘এই সময়ে অং সান সু চির বিরুদ্ধে আরও কত মামলা হবে, সেই ব্যাপারে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। এই সময়ে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে।’

আইনজীবী জাও জানিয়েছেন, সু চির বিরুদ্ধে যোগাযোগ আইন লঙ্ঘন ও গণ–অসন্তোষ উসকে দেওয়ার আরও দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয়েছে।

আগে দুটি অভিযোগে সু চি দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর তিন বছরে কারাদণ্ড হতে পারে। তবে পরের দুটি অভিযোগে সাজার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে জানা যাচ্ছে, তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে ভবিষ্যতে আর নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না। মামলার শুনানি আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর থেকে মিয়ানমারে সু চির জনপ্রিয়তা বাড়লেও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি এখনো তলানিতে।

সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলার সময় সামরিক বাহিনীর একটি সাঁজোয়া যানবাহনের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে এক বিক্ষোভকারী। মিয়ানমার, ১৫ ফেব্রুয়ারি
ছবি: রয়টার্স

এর মধ্যে মিয়ানমারজুড়ে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জোরালো হয়েছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি শহরেই নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারীরা মুখোমুখি অবস্থানে। রোববার পুলিশের গুলিতে ১৮ জন নিহত হওয়ার পর আরও বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার জানিয়েছে, ১ হাজার ১০০–এর বেশি লোককে আটক করা হয়েছে।

আজও মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভকারীরা বাঁশের খুঁটি, সোফা, গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেছেন। একটি স্থানে পুলিশ নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়েছে। ফেসবুকে সেটি লাইভ করা হয়। এএফপি ওই ঘটনা নিরপেক্ষভাবে নিশ্চিত করেছে। তবে এতে হতাহতের খবর জানা যায়নি।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ও দেশটির নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন হাজারো মানুষ। সেই বিক্ষোভ দমনে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। সম্প্রতি রাজধানী নেপিডোতে।
ছবি: রয়টার্স

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন–পীড়নে জান্তা সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি গতকাল রোববার বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন–পীড়নের নিন্দা জানিয়ে তা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, নিরীহ মানুষের ওপর দমন–পীড়নে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।