ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর ঘিরে মিয়ানমারে নতুন উদ্বেগ

ইয়াঙ্গুনে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে তিন আঙুল তুলে স্যালুট জানাচ্ছেন এক বিক্ষোভকারী।ছবি: এএফপি

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামীকাল বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সফরে যাবেন। সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এই প্রথমবারের মতো বহির্বিশ্বের কোনো নেতা দেশটিতে সফর করছেন। এই সফরকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। এই সফরে জান্তা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে বলে আশঙ্কা বিক্ষোভকারীদের। মিয়ানমারের মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো মনে করছে, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর জান্তা সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপ হতে পারে। খবর রয়টার্সের।

মিয়ানমারে আজ বুধবার জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আরও বেশি বিক্ষোভ হতে পারে। গত সোমবার জান্তা সরকারের হুঁশিয়ারির প্রতিবাদে দেশটিতে সাধারণ ধর্মঘট ডাকেন বিক্ষোভকারীরা। সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ ও মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি দাবিতে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে।

গতকালও বিক্ষোভ হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী আজ ইয়াঙ্গুনের উত্তরে অবস্থিত মায়ানগনে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছেন।

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি আগামীকাল মিয়ানমারে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তাঁর সফর ঘিরে মিয়ানমারের অনেক বিক্ষোভকারীর মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। জান্তা সরকারের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার কোনো সমঝোতা হতে পারে ভেবে উদ্বিগ্ন বিক্ষোভকারীরা।

রেতনো মারসুদি মিয়ানমার ইস্যুতে বিশেষ বৈঠকের জন্য দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সমর্থন আদায়ে কাজ করছেন। বিভিন্ন সূত্র বলছে, মিয়ানমারের জান্তা সরকার যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে, সে জন্য দেশটিতে পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রস্তাব করেছে জাকার্তা।

ইয়াঙ্গুনে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ।
ছবি: এএফপি

ইয়াঙ্গুনে গতকাল ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভে জড়ো হন কয়েক শ মানুষ। মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী আজ আরও একটি বিক্ষোভ করবেন।

মিয়ানমারভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন দ্য ফিউচার নেশন অ্যালায়েন্স এক বিবৃতিতে বলেছে, রেতনো মারসুদির সফর জান্তা সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার শামিল হতে পারে। তাদের দাবি, মিয়ানমারের বহিষ্কৃত আইনপ্রণেতাদের নিয়ে গঠিত কমিটি রিপ্রেজেন্টেটিং পিদায়ুনসু হুলুততোর (সিআরপিএইচ) প্রতিনিধি হিতিন লিন অংয়ের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ করার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে হিতিন লিং অং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন।

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গতকাল বলেন, রেতনো মারসুদি থাইল্যান্ডে ছিলেন। তিনি অন্যান্য দেশেও সফর করতে পারেন। তবে কোন কোন দেশে সফর করবেন, তা জানানো হয়নি।

শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি–৭ গতকাল সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে। জি–৭–ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ বিবৃতিতে জানান, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে দমনে সহিংস আচরণ করলে জবাবদিহি করতে হবে। দেশটির সেনাবাহিনীর আরও দুই নেতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে।

মিয়ানমারে গত নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। ওই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। আটক করা হয় এনএলডির নেতা অং সান সু চিসহ দলের শীর্ষ নেতাদের। সেই থেকে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে। এ পর্যন্ত এই বিক্ষোভে তিনজনের প্রাণহানি হয়েছে।