ইরানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ

বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শরিফ ও আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। সন্ধ্যার দিকে তা বিক্ষোভ সমাবেশে পরিণত হয়। ছবি: এএফপি
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শরিফ ও আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। সন্ধ্যার দিকে তা বিক্ষোভ সমাবেশে পরিণত হয়। ছবি: এএফপি

ইরান নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইউক্রেনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ায় কথা স্বীকার করার পর দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়তে হাজারো শিক্ষার্থী তেহরানের রাস্তায় নেমে এসেছে। বিক্ষোভ থেকে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পদত্যাগ দাবি করা হয়।

৩ জানুয়ারি ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের কুদস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সোলাইমানি হত্যার বদলা নিতে গত বুধবার ভোরের দিকে মার্কিন সেনারা থাকেন, ইরাকে এমন দুটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এর কয়েক ঘণ্টা পর তেহরানের উপকণ্ঠে ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। এতে ৮২ জন ইরানের ও ৫৩ জন কানাডার এবং ৯ জন ক্রুসহ ইউক্রেনের ১১ নাগরিকসহ উড়োজাহাজের ১৭৬ আরোহীর সবাই নিহত হন।

বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শরিফ ও আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। সন্ধ্যার দিকে তা বিক্ষোভ সমাবেশে পরিণত হয়। ছবি: এএফপি
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শরিফ ও আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। সন্ধ্যার দিকে তা বিক্ষোভ সমাবেশে পরিণত হয়। ছবি: এএফপি

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দাবি করে আসছিল কানাডাসহ পশ্চিমা দেশগুলো। প্রথমে এই দাবি অস্বীকার করে তেহরান। তবে পুঙ্খানুপুঙ্খ আন্তর্জাতিক তদন্তের কারণে বাড়তে থাকা চাপের মুখে সত্য লুকানো সম্ভব হলো না ইরানের। গতকাল শুক্রবার ইরান স্বীকার করে নিল, তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি। তবে ইচ্ছাকৃত নয়, শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান ভেবে ভুলে এটা হয়েছে।

বিবিসি গতকাল জানায় স্থানীয় খবরে বলা হয়, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গতকাল শরিফ ও আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। সন্ধ্যার দিকে তা প্রতিবাদ ক্ষোভে পরিণত হয়।

আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফারসের খবরে বলা হয়, এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী দেশটির নেতাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। একই সঙ্গে সোলাইমানির ছবি ছিঁড়ে ফেলে। শিক্ষার্থীরা বিমানটিকে ভূপতিত করার সঙ্গে জড়িতদের এবং যারা নিজেদের দায়কে আড়াল করতে চেয়েছে তাদের সবার বিচার দাবি করেন।

 ‘কমান্ডার ইন চিফ’ হিসেবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পদত্যাগ এবং উড়োজাহিজ ভূপাতিত করার ঘটনা প্রথমে গোপন করায় ‘মিথ্যাবাদীদের মৃত্যুদণ্ড’ দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা।

বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শরিফ ও আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। সন্ধ্যার দিকে তা বিক্ষোভ সমাবেশে পরিণত হয়। ছবি: এএফপি
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শরিফ ও আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। সন্ধ্যার দিকে তা বিক্ষোভ সমাবেশে পরিণত হয়। ছবি: এএফপি

ফারসের খবরে বলা হয়, সড়ক অবরোধ করে রাখা বিক্ষোভকারীদের পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়তে দেখা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সরকারের সমালোচনায় ভাসছে। ইরানের লোকজন এমন হীন কর্মকাণ্ডের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘আমি কখনোই আমার দেশের এসব কর্মকর্তাকে ক্ষমা করব না, তারা ঘটনাস্থলে থাকার পরও মিথ্যা বলেছে।’

তবে সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরান জুড়ে মানুষের যে ঢল নেমেছিল সেই তুলনায় এ প্রতিবাদ অনেক ছোট ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইংরেজি ও ফারসিতে লেখা এক টুইটে বলেন,‘সাহসী ও ভুক্তভোগী ইরানি লোকজন: আমার প্রেসিডেন্সি শুরুর সময় থেকে আপনাদের পাশে আছি এবং আমার সরকারও ধারাবাহিকভাবে আপনাদের পাশে থাকবে।’ ‘আমরা নিবিড়ভাবে আপনাদের বিক্ষোভ লক্ষ্য করছি। আপনাদের সাহস অনুপ্রেরণাদায়ী।