ইসরায়েল নীতি নিয়ে নিজ দলেই তোপের মুখে বাইডেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
ফাইল ছবি: এএফপি

গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অগণতান্ত্রিক পন্থায় নানা মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন। এ ঘটনায় মার্কিন প্রশাসনের সরকারি নীতি (জিওপি) নিয়ে দেশের মধ্যে সৃষ্ট বিভক্তি অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করে।
কিন্তু এবার মার্কিন প্রশাসনের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এখন তাঁর দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যেই মতবিরোধ দানা বেঁধে উঠছে। এর নেপথ্যে রয়েছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত, সে বিষয়টি। ডেমোক্র্যাটরা মানবাধিকার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। দাবি করছেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত হামলা বন্ধে ইসরায়েলের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে। খবর সিএনএনের।


এই চাপ ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একধরনের অস্বস্তিকর প্রকাশ্য লড়াইয়ের মতো। কেননা গত নির্বাচনে দলটি সামাজিক ও বর্ণবাদী বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে তাদের অন্যতম অ্যাজেন্ডা হিসেবে প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দেশটি নিজেই বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন পন্থায় বর্ণবাদের খপ্পরে পড়েছে। তা থেকে বেরিয়ে আসতে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের (কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান) মতো আন্দোলন মূলধারার পন্থা হিসেবে গৃহীত হয়েছে। এখন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সংঘাতে উদারপন্থীরা চান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে ন্যায়বিচারের একই রকমের ধারণার প্রয়োগ। ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েল বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে—এই মতের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান হারে জনমত সৃষ্টি হচ্ছে।

ইসরায়েলের আগ্রাসী হয়ে ওঠা ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে চললেও তা উপেক্ষা করায় হোয়াইট হাউসের সমালোচনা করছেন সোচ্চার কণ্ঠের উদারপন্থীরা। পূর্ব জেরুজালেমের আশপাশের এলাকা থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদে ইসরায়েলি পরিকল্পনার প্রকাশ্য নিন্দা না জানানোয় ব্যক্তিগতভাবে বাইডেনের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তাঁরা।
গাজায় গত সোমবার থেকে থেমে থেমে ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপের পর তিনি ফিলিস্তিনে হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

গুঁড়িয়ে দিচ্ছে বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফিলিস্তিনিদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি করছে ইসরায়েলের সেনারা। অথচ গত শনিবার দুই পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বললেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ইঙ্গিত দিলেন চলতি ইস্যুতে নিজেকে গভীরভাবে সম্পৃক্ত করার। বিমান হামলায় গাজায় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের কার্যালয় থাকা একটি ভবন বিধ্বস্ত হওয়ায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
কিন্তু উদারপন্থী ডেমোক্র্যাটরা চান বাইডেনের আরও সম্পৃক্ততা। তাঁরা চান ইসরায়েলের আগ্রাসন নিয়ে তিনি যেন প্রকাশ্য বিবৃতি দেন। কিন্তু অন্তত প্রকাশ্যে এখন পর্যন্ত তিনি এ রকম কোনো অবস্থান গ্রহণ করা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে বলেন, ‘এই সংঘাত নিয়ে এ পর্যন্ত বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া আমার নজরে আসেনি।’

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় এক সপ্তাহে প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে হাজারের বেশি। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ইহুদিদের সঙ্গে স্থানীয় আরবদের সহিংসতা শুরু হয়েছে।

নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়েছে আল জাজিরা ও এপিসহ আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের কার্যালয়
ছবি: রয়টার্স


ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনজুড়ে চরম অস্থিরতার মধ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজের সঙ্গে রোববার কথা বলেছেন। পরে অস্টিন টুইটারে লেখেন, ‘নিজেকে রক্ষায় ইসরায়েলের অধিকার রয়েছে, সে বিষয়ে আমি আবারও আশ্বস্ত করছি। এ ছাড়া বেসামরিক ইসরায়েলিদের নিশানা করে হামাসের হামলার নিন্দা জানাচ্ছি।’

ইতিমধ্যে বুধবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনও অতীতে মার্কিন প্রশাসনের বারবার আওড়ানো মন্ত্র উচ্চারণ করে বলেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। বাইডেনের এ মন্তব্যে আরও ক্ষুব্ধ হন তাঁর দলের উদারপন্থীরা। এ নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।

গাজায় ঈদের দিন সকালেও বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ফিলিস্তিন, ১৩ মে
ছবি: এএফপি


গত বৃহস্পতিবার এক জ্বালাময়ী বক্তৃতায় নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ জানতে চান, ‘ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে কি?’ প্রগতিশীল এই ডেমোক্র্যাট সদস্য সপ্তাহান্তে টুইটারে লেখেন, যদি বাইডেন প্রশাসন কোনো মিত্রের (ফিলিস্তিন) পাশে দাঁড়াতে না পারে, তবে কে দাঁড়াতে পারবে? তারা (প্রশাসন) কীভাবে মানবাধিকারের পাশে দাঁড়ানোর গ্রহণযোগ্য দাবি করতে পারে?

এদিকে মিশিগান থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য রাশিদা তায়েব গাজায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কার্যালয় যে ভবনটিতে অবস্থিত, সেখানে ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা করে রোববার বলেন, ইসরায়েল গণমাধ্যমকে নিশানা করছে, যাতে বর্ণবাদী নেতা নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে দেশটির যুদ্ধাপরাধ বিশ্ব দেখতে না পারে।
বাইডেন প্রশাসনের প্রতি নানাভাবে ক্ষোভ জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন, সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সসহ আরও অনেকে।