ইয়াঙ্গুনে রাতভর অভিযান, দিনে বিক্ষোভে গুলি

ইয়াঙ্গুনের সড়কে তৎপর দাঙ্গা পুলিশ। ইয়াঙ্গুন, মিয়ানমার, ২৬ ফেব্রুয়ারি
ছবি: এএফপি

মিয়ানমারের প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের উপকণ্ঠের একটি বিক্ষুব্ধ জেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতভর দমনমূলক অভিযান চালিয়েছে দেশটির পুলিশ। এরপর আজ শুক্রবার ইয়াঙ্গুন ও মান্দালে শহরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালানো হয় তাঁদের ওপর।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বৃহস্পতিবার রাতভর অভিযানের পরও আজ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভে নামে শত শত মানুষ। লোকজনকে গুলি করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালেতেও গুলি হয়েছে। তবে সেখানে সরাসরি বিক্ষোভকারীদের ওপর নাকি পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছে তা পরিষ্কার নয়। দুই শহরেই গুলিতে হতাহতের ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ইয়াঙ্গুনের তামওয়ে এলাকায় গত রাতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে দাঙ্গা পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ব্যবহার করে সাউন্ড গ্রেনেড। সামরিক জান্তার নিয়োগ করা এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এলাকাটির লোকজন বিক্ষোভ দেখান।
রাতভর পুলিশের মারমুখী আচরণ সম্পর্কে সেখানকার এক বাসিন্দা আজ শুক্রবার বলেন, ‘আমরা সত্যিই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম।’

সকালে এলাকাটির বাসিন্দারা সড়কে সাউন্ড গ্রেনেডের খোসা পড়ে থাকতে দেখেন। এ ছাড়া সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বিক্ষোভকারীদের জুতা।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই বিক্ষোভের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৩ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে ১০ জন নারী।

এক বিক্ষোভকারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ইয়াঙ্গুন, মিয়ানমার, ২৬ ফেব্রুয়ারি
ছবি: এএফপি

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের এমন সাংঘর্ষিক অবস্থানে এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে দেশটির সামরিক জান্তা সমাজের সব মহল থেকে প্রতিরোধের মুখে পড়ছে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা পুরো দেশ তথা জনগণের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব বজায় রাখতে জোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

মিয়ানমারে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশটির বিভিন্ন শহর-নগরে নিয়মিত বিক্ষোভ হচ্ছে। তার সঙ্গে আছে ধর্মঘট বা অসহযোগের মতো কর্মসূচি।

মিয়ানমারে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে টানা বিক্ষোভ চলছে। এসব বিক্ষোভে হাজারো মানুষ অংশ নিচ্ছে। বিক্ষোভ দমনে দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষ বল প্রয়োগ করছে।

মিয়ানমারে গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে জয়ী হয়। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে দেশটির সেনাবাহিনী। ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে তারা ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান করে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। আটক করে এনএলডির নেত্রী অং সান সু চিসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের। একই সঙ্গে মিয়ানমারে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাবাহিনী।