ঈদের পোশাক পরা শিশুগুলোর প্রাণ গেল ইসরায়েলি বোমায়

ইসরায়েলের বিমান হামলায় এক পরিবারের ১০ সদস্যকে হারিয়ে স্বজনের কান্না। গাজার বেইত লাহিয়ার এক হাসপাতালে, ১৫ মে
ছবি: এএফপি

ঈদ উপলক্ষে একত্র হয়েছিল ভাইবোনের পরিবার। শিশুরা পরে ছিল নতুন পোশাক। কিন্তু ইসরায়েলের জঙ্গি বিমান থেকে ফেলা বোমায় মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায় তাঁদের তিনতলা ভবন। সেখানেই শেষ হয়ে যায় সব। পরে ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় ৮ শিশুসহ ১০ স্বজনের মৃতদেহ।

ঘটনাটি শনিবার ভোরে গাজার পশ্চিমাঞ্চলের একটি শরণার্থীশিবিরে। এ খবর জানিয়ে এএফপি বলেছে, গত কয়েক দিনের মতো এই রাতেও গাজার অনেক স্থাপনায় বিমান থেকে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ভবনটিতে বোমায় নিহত ১০ জনের মধ্যে বাকি ২ জন নারী, তাঁরা পরস্পরের আত্মীয়। নিহত শিশুদের ৪ জন এসেছিল মামার বাসায়। তাঁদের বাবা মোহাম্মদ আল-হাদিদির সঙ্গে কথা হয় এএফপির।

গাজা শহরের শিফা হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে আল-হাদিদি বলেন, তাঁর চাওয়া ‘ন্যায়হীন বিশ্ব’ এসব অপরাধ দেখুক।

সন্তানহারা এই বাবা বলেন, ‘ঘরের মধ্যে শিশুরা নিরাপদেই ছিল, তারা কোনো অস্ত্রও বহন করছিল না, তারা কোনো রকেটও ছোড়েনি। তারা ঈদের পোশাক পরে ছিল।’

শ্যালক মোহাম্মদ আবু হাত্তাবের আমন্ত্রণে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন আল-হাদিদি। হামলার সময় আবু হাত্তাব ও আল-হাদিদি দুজনই বাইরে ছিলেন। আবু হাত্তাবের পাঁচ মাস বয়সী ছেলেটাও প্রাণে বেঁচে গেছে।

আরও পড়ুন

গত সোমবার রাত থেকে গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এর মধ্যে শুক্রবার ভোর রাতে তারা বিমানের পাশাপাশি ট্যাংক ও কামান থেকে গোলা ছোড়ে। ইসরায়েলিদের হামলায় এখন পর্যন্ত ১৪০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৯ জনই শিশু। হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৯৫০ জন ফিলিস্তিনি।

পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকা থেকে কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবার উচ্ছেদের হুমকিতে পড়ায় তা নিয়ে রোজার মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। চলতি মাসের শুরু থেকে এ নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ফিলিস্তিনিরা।

এর জের ধরে পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ চত্বরে তাঁদের সঙ্গে কয়েক দফায় ইসরায়েলি পুলিশের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে সেখানে অবস্থান নেয় ইসরায়েলি পুলিশ।

ওই মসজিদ চত্বর থেকে পুলিশকে সরে যেতে সময় বেঁধে দেয় গাজা শাসনকারী হামাস। তাঁদের হুমকিতে কান না দেওয়ায় গত সোমবার রাতে গাজা থেকে ইসরায়েলের উদ্দেশে রকেট ছোড়া হয়। এরপর গাজায় বিমান থেকে বোমা ফেলা শুরু করে ইসরায়েল, যা এখনো চলছে।

ওই পরিবারের এক সদস্যের লাশ নিয়ে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ। গাজা, ১৫ মে
ছবি: এএফপি

অপর দিকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট ছুড়ে চলেছে হামাস। তবে ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় অধিকাংশ রকেটই আটকে যাচ্ছে। এরপরেও কিছু রকেট ইসরায়েলের বসতি এলাকায় গিয়ে আঘাত হেনেছে। এতে এক শিশু, এক সৈনিকসহ ৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন।

বলা হচ্ছে, ২০১৪ সালের পর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের ঘটনা। ইসরায়েল হামলার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছে গাজার পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা, নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর ভবন। এর মধ্যে হামলায় বহু সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়ি জ্বলছে।

হামলা থেকে বাঁচতে গাজার উত্তরাঞ্চলে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জাতিসংঘ বলেছে, ইসরায়েলের হামলা থেকে বাঁচতে প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।

এদিকে, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা হ্রাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত হাদি আমর ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে গেছেন। সেখানে তিনি জাতিসংঘ, ইসরায়েল, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে আগামী সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক হবে। এর এক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সম্পর্কবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হাদি তেল আবিব গেলেন। তাঁর এই সফর নিয়ে ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বলেছে, দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করবেন তিনি।

আরও পড়ুন