উইঘুরদের নির্যাতন-পীড়নে চীনের নেতারা, ফাঁস জিনজিয়াং পেপারস

জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুরদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ রয়েছে (ফাইল ছবি)
ছবি: এএফপি

উইঘুর মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়নের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ অন্য চীনা নেতাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার তথ্য ফাঁস হয়েছে। নতুন ফাঁস হওয়া ওই নথিগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে জিনজিয়াং পেপারস। বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর জাতিসত্তার লোকজনের ওপর দেশটির কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বন্দিশিবিরে আটকে রেখে উইঘুর মুসলিমদের ওপর ভয়ংকর নির্যাতন চালাচ্ছে চীন। এ ছাড়া লাখ লাখ মানুষের ওপর নজরদারি করছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নেদারল্যান্ডসসহ বেশ কয়েকটি দেশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য বেইজিংকে দায়ী করে থাকে। তবে চীন জোরালোভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দেশটির দাবি, সন্ত্রাসবাদ দমন ও ইসলামি উগ্রপন্থা নির্মূল করতে জিনজিয়াংয়ে কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের অংশ হিসেবে বন্দীদের ‘পুনঃশিক্ষণ’ দিতে বন্দিশিবির কার্যকর উপায় বলে দাবি করে তারা।

নতুন ফাঁস হওয়া নথিতে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংসহ অন্য নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্য আছে। সেগুলো বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উইঘুর মুসলিমদের জন্য বন্দিশিবির স্থাপন ও তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক শ্রম আদায়ের ঘটনায় চীনের জ্যেষ্ঠ সরকারি নেতারা জড়িত। উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াংসহ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছিলেন। আর সেসব বক্তব্যের ভিত্তিতে উইঘুর ও অন্য মুসলিমদের লক্ষ্য করে কঠোর নীতিমালা তৈরি হয়েছে। এসব নীতিমালার মধ্যে রয়েছে জোরপূর্বক বন্দী রাখা, গণহারে বন্ধ্যত্বকরণ, সংখ্যাগরিষ্ঠদের সংস্কৃতি অনুসরণে বাধ্য করা, পুনঃশিক্ষণ এবং আটক উইঘুরদের বিভিন্ন কারখানায় কাজ করতে বাধ্য করা।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন ফাঁস হওয়া নথির কিছু কিছু তথ্য আগেও প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে এবারের নথিতে এমন কিছু তথ্য আছে, যা আগে কখনো প্রকাশ্যে আসেনি।

এ নথিগুলো যুক্তরাজ্যে উইঘুর ট্রাইব্যুনাল নামে গঠিত স্বাধীন ট্রাইব্যুনালের কাছে গত সেপ্টেম্বরে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে এর আগে তা পুরোপুরি প্রকাশ করা হয়নি। নথিগুলোর সত্যতা যাচাই করতে তিন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। তাঁরা হলেন ড. আড্রিয়ান জেঞ্জ, ডেভিড টোবিন ও জেমস মিলওয়ার্ড। নতুন ফাঁস হওয়া নথিগুলোর ব্যাপারে জেঞ্জ বলেন, সেখানকার বক্তব্যগুলো বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। এতে দেখা গেছে, চীন সরকারের শীর্ষ নেতারা যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং পরবর্তী সময়ে উইঘুরদের বিরুদ্ধে যে নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তার মধ্যে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ তথ্যগুলো আগের চেয় অনেক বেশি বিস্তারিত ও তাৎপর্যপূর্ণ।
এর আগে ২০১৯ সালে নিউইয়র্ক টাইমস উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা সরকারের আচরণ নিয়ে ফাঁস হওয়া কিছু নথি হাতে পাওয়ার কথা বলেছিল। তবে তখন সে নথিগুলোর সব কটি জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হয়নি।