এই প্রথম ঋণখেলাপি হলো শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কা দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়েছে। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট চলছে
ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কা দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণখেলাপি হলো। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটি ৭০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। ঋণের ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার সুদ প্রদানের ৩০ দিনের বর্ধিত সময়সীমা গত বুধবার শেষ হলে দেশটিকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করা হয়। খবর বিবিসির।

বিশ্বের অন্যতম বড় দুটি ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডি ইনভেস্টর সার্ভিস ও ফিচ রেটিংস গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের শেষ দিকে জানায়, শ্রীলঙ্কা ঋণখেলাপি হয়েছে। তবে এর আগে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, দেশ এখন ‘প্রাক্‌-ঋণখেলাপি’ অবস্থা তথা খেলাপি ঘোষণার পূর্ব অবস্থায় আছে।

যখন কোনো সরকার ঋণদাতাদের কিছু অথবা পুরো অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য হারায়, তখন ঋণখেলাপের বিষয়টি ঘটে। ঋণখেলাপের ফলে বিনিয়োগকারীদের কাছে দেশটির সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রয়োজনীয় অর্থ ঋণ নেওয়া কঠিন হবে দেশটির জন্য। সব মিলিয়ে দ্বীপরাষ্ট্রটির মুদ্রা ও অর্থনীতির ওপর আস্থা আরও নষ্ট হবে।

শ্রীলঙ্কা এখন ঋণখেলাপি কি না, বৃহস্পতিবার জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নন্দলাল বিরাসিংহে বলেন, ‘আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার—যতক্ষণ না তারা আমাদের ঋণ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসে, আমরা তা পরিশোধ করতে পারব না। তাই এটাকে আপনি ঋণখেলাপি হওয়ার পূর্বাবস্থা বলতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে এখানে কৌশলগত দিক থাকতে পারে...তাদের পক্ষ থেকে তারা খেলাপি মনে করতে পারে। আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট—যতক্ষণ না ঋণ পুনর্গঠন হচ্ছে, আমরা পরিশোধ করতে পারব না।’

বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে নেওয়া ৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণ পুনর্গঠন চাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। এতে এসব ঋণ পরিশোধ তাদের জন্য আরও সহজ হবে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে দেশটি। দাতাদের সঙ্গে ঋণের বিষয়ে সমঝোতার জন্য পুনরায় আলোচনা চালিয়ে যেতে এটা প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবার দিন শেষে আইএমএফ মুখপাত্র জানান, সম্ভাব্য ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে চলমান আলোচনা মঙ্গলবার শেষ হতে পারে। এদিকে চলতি বছরে দেশটির চার বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন বলে এর আগে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

মুডি বলছে, ‘প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বন্ডে খেলাপি হয়েছে শ্রীলঙ্কা।’ ঋণ পরিশোধের বর্ধিত সময়সীমা পার হওয়ার পর মূল্যায়নে শ্রীলঙ্কার অবস্থান ‘রেসট্রিক্টেড ডিফল্ট’-এ অবনমন করেছে ফিচ রেটিংস।

করোনা মহামারির ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটি ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়েছে। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুতের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকার প্রতিবাদে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভ গত সপ্তাহে সহিংস হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের সমর্থকেরা কলম্বোয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে কমপক্ষে ৯ জন নিহত ও ৩০০ জন আহত হন।

একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের নির্দেশে ৯ মে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রবীণ রাজনীতিক রনিল বিক্রমাসিংহেকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

আরও পড়ুন