এবার জাপান-চীন-দক্ষিণ কোরিয়ার জোট, সঙ্গে আরও ১৩ দেশ

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন, চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেচিয়াং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন, চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেচিয়াং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন। ছবি: রয়টার্স

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন আজ মঙ্গলবার চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমের শহর চেংদুতে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেচিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য বিরোধ চলাকালে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল জুড়ে নতুন একটি মুক্ত বাণিজ্য জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উঠে এসেছে।

পাশাপাশি কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা প্রশমন এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রশ্নে মত বিনিময় করেছেন তিন নেতা। বৈঠকের শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চীনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন দেশ একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন নিয়ে আলোচনা ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি আরও ১৩টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পাদন নিয়েও আলোচনা করেছে। তিনি বলেন, মুক্ত বাণিজ্য নীতি সমুন্নত রাখাসহ তিন দেশের অর্থনৈতিক সংযুক্তি এগিয়ে নিতে তাঁরা সম্মত হয়েছেন।

আলোচনায় উত্তর কোরিয়ার পরমাণু পরীক্ষা এবং কোরীয় উপদ্বীপের শান্তির বিষয়টিও অগ্রাধিকার পায়। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চীনের প্রধানমন্ত্রী সংলাপের মধ্যে দিয়ে কোরীয় উপদ্বীপের সমস্যা সমাধানের আশা ব্যক্ত করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া আলোচনায় গতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি পিয়ংইয়ংয়ের উচিত হবে উত্তর কোরিয়া সংক্রান্ত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়িত করা। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন বলেন, কোরীয় উপদ্বীপে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার লক্ষ্য অর্জনে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সহযোগিতা বজায় রাখতে তিন দেশ সম্মত হয়েছে।

জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার এই ত্রি-পক্ষীয় আলোচনা কেবল নিরাপত্তা ও বাণিজ্য নিয়ে মতামত বিনিময়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। পূর্ব এশিয়ার তিন প্রতিবেশী দেশের নেতারা এ রকম আলাপের মধ্যে পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে দুর্যোগ প্রতিরোধ এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা উন্নত করে নেওয়ার উপায় নিয়েও মত বিনিময় করে থাকেন। ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক পর্যায়ক্রমিক এই আলোচনার ২০তম বার্ষিকী এ বছর পালিত হয়।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন দেশের মধ্যে নাগরিক পর্যায়ের বিনিময় জোরদার করে নিতে তাঁরা সম্মত হয়েছেন। নাগরিক পর্যায়ের যোগাযোগে খেলাধুলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের আভাস দিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, আগামী বছরের অলিম্পিক ও প্রতিবন্ধীদের প্যারা অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন সফল করে তুলতে জাপান দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। সেই লক্ষ্যে তিন দেশ খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে মৈত্রীর বন্ধন ও সহযোগিতা আরও গভীর করে নেওয়া নিশ্চিত করে নিয়েছে।

এদিকে ত্রি-পক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকের বাইরে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতারা এক বছরের বেশি সময় পর আবারও প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় মিলিত হন। দুই নেতা সেখানে ইতিহাসসংক্রান্ত ধারণা নিয়ে দেখা দেওয়া বিরোধ ও অন্যান্য মতপার্থক্য দূর করে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন। ৪৫ মিনিট ধরে চলা বৈঠকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় জাপানি কোম্পানিতে কাজ করা কোরীয় শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে দক্ষিণ কোরিয়ার সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের উল্লেখ করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আদালতের সেই রায় হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে ফাটল ধরার পেছনে মুখ্য কারণ, পরবর্তীতে যা বাণিজ্য বিরোধকে প্রভাবিত করে। ফলে সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে পাওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।

উত্তরে মুন বলেছেন, সমস্যার দ্রুত নিষ্পত্তি খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্য তিনি নিয়েছেন। তবে তিনি মনে করেন, দুই দেশের সামনে দেখা দেওয়া সব রকম চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হলে দু দেশের নেতৃবৃন্দের সরাসরি সংলাপে বসার কোনো বিকল্প নেই। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে দুই নেতা সম্মত হয়েছেন।

আবে-মুন বৈঠককে জাপানের সংবাদমাধ্যম তিক্ত হয়ে আসা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অচলাবস্থা ভেঙে বের হয়ে আসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। কেননা এর আগে এমনকি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফোরামে সাক্ষাৎ ঘটলেও একে অন্যের সঙ্গে কথা বলা থেকে তাঁরা বিরত ছিলেন।