করোনার অন্য ধরনগুলোর চেয়ে ডেলটা কেন দ্রুত ছড়ায়

করোনাভাইরাসের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তা নিয়মিত রূপান্তরিত হয়।
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের উদ্বেগজনক ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। করোনার নতুন এই ঢেউয়ের জন্য যেসব কারণকে জনস্বাস্থ্যবিদেরা দায়ী করছেন, এর মধ্যে প্রধানতম হলো ডেলটা ধরনের বিস্তার। করোনার অন্য সব ধরনের চেয়ে ডেলটা কেন দ্রুত ছড়াচ্ছে, তা খতিয়ে দেখেছে সিএনএন অনলাইন।

সিএনএন অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেলটা করোনার একটি উচ্চ সংক্রামক ধরন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, গত বছরের শেষ দিকে যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত হয় করোনার আলফা ধরন। এই ধরনকে অতি সংক্রামক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু আলফার চেয়ে ডেলটা ৫৫ শতাংশ দ্রুত ছড়ায়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করোনা মোকাবিলা-সংক্রান্ত দলের সাবেক উপদেষ্টা অ্যান্ডি স্লাভিট বলেন, ডেলটাকে কোভিড-১৯-এর ২০২০ সালের সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তি ও বিস্তার শুরু হয় ২০১৯ সালের শেষ ভাগে চীনে। এরপর এই ভাইরাস সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। করোনাভাইরাসের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তা নিয়মিত রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় ইতিমধ্যে বিশ্বে ভাইরাসটির অনেকগুলো ধরন বা সংস্করণ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ডেলটা অন্যতম।

২০২০ সালের শেষ দিকে ভারতে প্রথম করোনার ডেলটা ধরন শনাক্ত হয়। একে শুরুর দিকে করোনার ভারতীয় ধরন বলা হতো। পরে ডব্লিউএইচওর পক্ষ থেকে এই ধরনের নতুন নাম দেওয়া হয় ‘ডেলটা ভেরিয়েন্ট’। ধরনটির বৈজ্ঞানিক নাম (বি.১.৬১৭)। গত মে মাসে করোনার ডেলটা ধরনকে ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ডব্লিউএইচও।

ভারতে করোনার ডেলটা ধরন শনাক্তের পর তা দ্রুত দেশটিতে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ভারতে করোনার ডেলটা ধরন প্রাধান্যশীল হয়ে ওঠে। ডেলটা ধরনের কারণেই ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করে। সংক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশটি। এতে ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে।

পরে করোনার ডেলটা ধরন যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়। এরপর একের পর এক দেশে ডেলটা ধরন শনাক্ত হওয়ার খবর আসতে থাকে।

ডব্লিউএইচও বলছে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে করোনার ‘ডেলটা’ ধরন শনাক্ত হয়েছে। ডব্লিউএইচও সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বে ডেলটার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। ফলে করোনার এই ধরন অন্য সব ধরনকে দ্রুত ছাপিয়ে যেতে পারে। এভাবে শিগগিরই বিশ্বে ডেলটা করোনার আধিপত্যশীল ধরন হয়ে উঠতে পারে।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন আশীষ ঝা বলেন, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের যতগুলো সংস্করণ শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ডেলটা সবচেয়ে সংক্রামক। তিনি বলেন, ‘এটা (ডেলটা) সত্যিই খুব সংক্রামক।’

যুক্তরাষ্ট্রে গত মার্চে প্রথম করোনার ডেলটা ধরন শনাক্ত হয়। জুলাইয়ের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীদের অর্ধেকের বেশি ছিলেন ডেলটায় সংক্রমিত। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানায়, এখন এই হার এখন ৮৩–তে পৌঁছে গেছে।

সিডিসির পরিচালক রচেল ওয়ালেনস্কি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনার ডেলটার সংক্রমণ বৃদ্ধির এই হার নাটকীয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সব কটিতেই করোনার ডেলটা ধরন পাওয়া গেছে। তাহলে প্রশ্ন জাগে, করোনার এই ধরন এত দ্রুত কীভাবে ছড়াচ্ছে?

একটি গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছে যে করোনার অন্য সব ধরনের চেয়ে এই ডেলটা ধরন মানুষের মধ্যে দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকতে পারে। কারণ, ধরনটি মানুষের শরীরে দ্রুত হারে নিজের অনেকগুলো ‘কপি’ করতে পারে।

চীনের বিজ্ঞানীরা ডেলটায় সংক্রমিত রোগীদের নিয়ে গবেষণা করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা মহামারির শুরুর দিকে আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে ডেলটায় সংক্রমিত রোগীদের তুলনা করেছেন। তাঁরা দেখতে পেয়েছেন যে ডেলটায় সংক্রমিত রোগীদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি অনেক বেশি। তুলনামূলক বিচারে এই পরিমাণ ১ হাজার ২৬০ গুণ বেশি।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন আশীষ ঝা বলেন, যাঁরা ডেলটা ধরনে সংক্রমিত হচ্ছেন, তাঁদের শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ অনেক বেশি। শরীরে ভাইরাস প্রবেশের খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এই সময়টা পাঁচ বা সাত মিনিট। তা ছাড়া এই ধরনে সংক্রমিত হতে আক্রান্ত ব্যক্তির ছয় ফুট দূরত্বের মধ্যেও কাউকে আসতে হবে না।

যাঁরা মানুষ টিকা নেননি, তাঁরাই বেশি ডেলটায় সংক্রমিত হচ্ছেন বলে জানান আশীষ ঝা। তিনি আরও বলেন, ডেলটা থেকে লোকজন সহজেই সংক্রমিত হচ্ছেন।