করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, মিয়ানমারের কারাগারে বিক্ষোভ

বিক্ষোভের পর মিয়ানমারের ইনসেইন কারাগার প্রাঙ্গণে সেনাসদস্যরা প্রবেশ করেছেন। তবে বিক্ষোভ দমনের নামে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে কি না কিংবা কেউ হতাহত হয়েছেন কি না, তা জানা যায়নি।
ছবি: এএফপি

মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে ইনসেইন কারাগারে বন্দীদের মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বন্দীরা কারাগারের ভেতরে বিক্ষোভ করেছেন। তবে এই বিক্ষোভে বন্দীদের মধ্যে কেউ হতাহত হয়েছেন কি না, তা জানা যায়নি।  সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভ থেকে আটক অনেককে এখানে বন্দী রাখা হয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদনে আজ শনিবার বলা হয়েছে, শুক্রবার মিয়ানমারের ইনসেইন কারাগারে বিক্ষোভ করেছেন বন্দীরা। গত ১ ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের পর এটাই দেশটির কোনো কারাগারে সংঘটিত  প্রথম বিক্ষোভের ঘটনা।

ইনসেইন কারাগারের বিক্ষোভের কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কারাগারের বাইরে থেকে ধারণ করা হয়েছে এসব ভিডিও। ভিডিওতে উপনিবেশ আমলের কারাগারটির ভেতরে বিক্ষোভকারীদের জান্তাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।

বিক্ষোভের বিষয়ে থাইল্যান্ডভিত্তিক অধিকার সংগঠন অ্যাসিস্টেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) জানিয়েছে, ইনসেইন কারাগারের নারী বন্দীদের ব্লকে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে তা অন্যান্য ব্লকে ছড়িয়ে পড়ে। কারাগারের কয়েকজন কর্মীও বিক্ষোভে যোগ দেন।

মিয়ানমারের কারা কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক চান নায়েন খাউ স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ইনসেইন কারাগারে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুন

এদিকে এএপিপির জানিয়েছে, বিক্ষোভের পর ইনসেইন কারাগার প্রাঙ্গণে সেনাসদস্যরা প্রবেশ করেছেন। তবে বিক্ষোভ দমনের নামে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে কি না কিংবা কেউ হতাহত হয়েছেন কি না, তা জানাতে পারেনি সংগঠনটি।

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে কারাগারটির মুখপাত্র যাও যাও এবং সামরিক মুখপাত্র যাও মিন তুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। তবে এর আগে যাও যাও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কারাগারে সংঘটিত বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে মিয়ানমারের জান্তা সরকার সাংবাদিকসহ ২ হাজারের বেশি কারাবন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। এরপরও ইসসেইনসহ দেশটির বিভিন্ন কারাগারে এখনো অনেক মানুষ বন্দী আছেন। এর মধ্যেই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে এক দিনে ৬ হাজারের বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর আগের দিন দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮৬ জন। শনাক্ত ও মৃত্যুর এই দুটো সংখ্যা দেশটিতে নতুন রেকর্ড।

আরও পড়ুন

তবে মিয়ানমারের চিকিৎসা খাত ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। স্বতন্ত্রভাবে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা করায় কয়েকজন চিকিৎসককে আটক করেছে জান্তা সরকার।

মিয়ানমারের কারাগারেও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। কারাবন্দীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারারক্ষীরা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী পাচ্ছেন না। মূলত এ কারণে ইনসেইন কারাগারে বন্দীরা বিক্ষোভ করেছেন। এএপিপির পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এমনটাই জানানো হয়েছে।

মিয়ানমারের গণমাধ্যমের খবর, কারাগারে থাকা অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হন অং সান সু চির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা নিয়ান উইন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে কারা কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার হাসপাতালে মারা যান তিনি।

আরও পড়ুন

এর আগে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে অক্সিজেন-সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে অক্সিজেনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আবার গুরুতর অসুস্থ অনেকেই হাসপাতালে যাচ্ছেন না। কারণ, হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট। সেই সঙ্গে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জামের ঘাটতিও। ফলে সাধারণ মানুষ ভয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন না। এতে অনেকে ঘরেই মারা যাচ্ছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। যত দিন যাচ্ছে, সংকট ততই বাড়ছে।

এদিকে কারা বিক্ষোভের ঘটনায় দমনপীড়ন না চালিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগ নিতে জান্তা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমা কূটনীতিকেরা। দেশটিতে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) নয়টি দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতেরা একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এই বিবৃতিতে তাঁরা জান্তা সরকারের প্রতি ইনসেইনসহ দেশটির সব কারাগারের বন্দীদের জন্য চিকিৎসাসেবার মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।