করোনায় ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে নেপাল

নেপালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে
ছবি : রয়টার্স

নেপালের করোনভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। প্রতিদিন সেখান করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশটির হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে গেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অন্য দেশের কাছে সাহায্য চাইছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, এখন নেপালে যে পরিস্থিতি চলছে, এক সপ্তাহ আগে ভারতে সেই পরিস্থিতি ছিল।

গত সপ্তাহে নেপালে যতজনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে, তার মধ্যে ৪৪ শতাংশেরই পজিটিভ এসেছে। দেশটির সরকারি তথ্যের বরাত দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) এ তথ্য জানিয়েছে।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে দেশটিতে আসন্ন সংকট বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

নেপালে রেডক্রসের চেয়ারপারসন নেত্র প্রাসাদ তিমসিনা এক বিবৃতিতে বলেছেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভারতে এখন যা ঘটছে, নেপালেও সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

নেপালের দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাজুক। ভারতের চেয়ে সেখানে মাথাপিছু চিকিৎসক কম। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় টিকা দেওয়ার হারও কম।

সিএনএন বলছে, নেপালে নানা উৎসব আয়োজন, রাজনৈতিক জমায়েত, বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠানের কারণে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এ ছাড়া নেপালের জনগণের আত্মতুষ্টি এবং সরকারি পদক্ষেপে ধীরগতিও এর জন্য দায়ীও।

নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সামির অধিকারী গত সোমবার বলেন, ‘পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’

নেপাল সরকার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং অধিক সংক্রমিত এলাকা লকডাউন করেছে। ইতিমধ্যে কাঠমান্ডুতেও লকডাউন জারি করা হয়েছে। তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, দেশটিতে রাজধানী ছাড়িয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি করোনাভাইরাস এভারেস্ট বেজ ক্যাম্পেও পৌঁছে গেছে।

এক মাস আগেও ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশ নেপালে দিনে ১০০ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছিল। এখন তা বেড়ে ৮ হাজার ৬০০ পার হয়ে গেছে।

সামির অধিকারী আরও বলেন, নেপালে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য কেউ কেউ ভারতের দ্বিতীয় করোনার ঢেউকে দায়ী করছেন। নেপাল ও ভারতের মধ্যে সীমান্তে মানুষের যোগাযোগ অনেক বেশি। অনেকেই ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় নেপালের স্বাস্থ্যসেবা পেতে পালিয়ে নেপালে গিয়েছেন। দুই দেশের মানুষের যাতায়াত ঠেকানো খুব কঠিন।

তবে সম্প্রতি ভারত থেকে নেপালে যাওয়ার নীতিমালা কঠোর করেছে। নেপালিরা কেবল ৩৫টি সীমান্ত পয়েন্টের মধ্যে ১৩টি দিয়ে ভারতে ঢুকতে পারেন। তবে নেপালে ঢুকতে সীমান্তে করোনা পরীক্ষা করতে হয়। কারও করোনা ধরা পড়লে কোরায়েন্টিন বা হাসপাতালে যেতে হয়।

তবে দেশটির পাবলিক হেলথ বিষয়ের গবেষক সামীর মানি দীক্ষিত বলেন, নেপাল সরকার করোনাভাইরাস ঠেকাতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা অনেক দেরি করে। ভাইরাসটি ইতিমধ্যে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার ব্রিটিশ দৈনিক ‘গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ নেপাল প্রতিবেশী ভারতের মতো ভয়াবহ করোনার সংক্রমণের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির চিকিৎসকেরা। এরই মধ্যে ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে উদ্বেগজনক হারে সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং হাসপাতালে শয্যা ও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।