কর্তৃত্ববাদের যুগে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার লড়াইয়ের প্রতীক মারিয়া রেসা

২০১৯ সালের ২৯ মার্চ ফিলিপাইনের পাসিগ শহরে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিক মারিয়া রেসা, সরকারের রোষানলে পড়ে একের পর এক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাঁকে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

একের পর এক মামলা, হুমকি–ধমকি, দুই দফা গ্রেপ্তার। তবু থামাননি কলম। মারিয়া রেসা তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে হয়ে উঠেছেন এক অদম্য যোদ্ধা, কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব কণ্ঠস্বর।

সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় মারিয়া রেসার এই সংগ্রামের স্বীকৃতি এসেছে নোবেল শান্তি পুরস্কারে। এ বছর রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি আন্দ্রেয়েভিচ মুরতাভের সঙ্গে যৌথভাবে বিশ্বের সর্বোচ্চ এই সম্মাননা পেয়েছেন ফিলিপাইনের নাগরিক মারিয়া রেসা।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, মারিয়া রেসার সাংবাদিকতার শুরু ১৯৮৬ সালে। তখন থেকে ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর কলম সচল রেখেছেন। একজন প্রতিবেদক হিসেবে যতটা খ্যাতি অর্জন সম্ভব, তার কিছুই অধরা থাকেনি তাঁর জীবনে। ৫৮ বছর বয়সে এসে মিলল শান্তিতে নোবেল।

আরও পড়ুন

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের ম্যানিলা ও জাকার্তার সাবেক ব্যুরো প্রধান মারিয়া রেসা ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন অনলাইন নিউজ ওয়েবসাইট ‘র‌্যাপলার’। উদ্দেশ্য, প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা। মাদক নির্মূলে সরকারি বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানসহ কর্তৃত্ববাদী দুতার্তেকে নিয়ে একের পর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে র‌্যাপলার। স্বাভাবিকভাবেই দুতার্তে সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি। মারিয়া রেসার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হয়। অনলাইনে আসতে থাকে হুমকি।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে মারিয়া রেসার নাম ধরে দুতার্তে নানা বিরূপ মন্তব্য করতে থাকেন, আক্রমণ করেন। এমনকি তিনি রেসার প্রতিষ্ঠিত র‌্যাপলারকে ‘ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ আখ্যায়িত করেন।

মারিয়া রেসা ছাড়াও র‌্যাপলার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত আছেন আরও দুজন। বিদেশি নাগরিকদের বিনিয়োগ, কর ফাঁকি, মানহানিকর সংবাদ প্রকাশসহ একের পর এক অভিযোগে মামলা দেওয়া হয় মারিয়া রেসার বিরুদ্ধে। স্বাভাবিকভাবেই ফিলিপাইন সরকারের এই বিদ্বেষী তৎপরতা তাঁর লড়াইকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি এনে দেয়।

কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক লড়াই চালিয়ে গেছেন মারিয়া রেসা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ভূমিকার জন্য ২০১৮ সালে মারিয়া রেসা প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী টাইমের ‘বর্ষসেরা ব্যক্তিত্বের’ তালিকায় ঠাঁই পান। তবে দুতার্তে সরকারের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর রেসার পক্ষে তৈরি হয় আন্তর্জাতিক জনমত।

ঝুঁকি সত্ত্বেও দুতার্তে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখেছেন মারিয়া রেসা। গত বছর এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কাউকে না কাউকে ঝুঁকি নিতেই হয়, সাহস দেখাতে হয় যাতে করে সতীর্থরা তাঁদের কাজ এগিয়ে নিতে পারেন।

মারিয়া রেসা বহু দেশে সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত ছিলেন। সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। আল–কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার জঙ্গিদের যোগাযোগের বিষয়টি তিনিই সামনে এনেছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত র‌্যাপলারে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি নিয়েও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক রেসা ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক।