কাবন যাবে কম্বোডিয়ায়

নিঃসঙ্গতম হাতি কাবন। সম্প্রতি ইসলামাবাদের মারগাজর চিড়িয়াখানায়
ছবি: রয়টার্স

‘বিশ্বের নিঃসঙ্গতম হাতি’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে হাতিটি। এই পরিচিতি পাবেই–বা না কেন? কুখ্যাত এক চিড়িয়াখানায় ছোট্ট একটি প্রকোষ্ঠে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছে হাতিটি। প্রথম দিকে একটি সঙ্গী থাকলেও আট বছর আগে সেটিও মারা গেছে। তারপর থেকে একেবারেই নিঃসঙ্গ জীবন। পুষ্টিহীনতা আর কায়িক শ্রমের ঘাটতির কারণে নড়াচড়া অনেকটাই কমে গেছে প্রাণীটির। পায়ের নখগুলো ভেঙে গেছে, এমনভাবে বিকৃত হয়েছে যে হাঁটতে–দাঁড়াতে কষ্ট হয়। আচরণেও পরিবর্তন এসেছে হাতিটির।

হাতিটির নাম কাবন। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের মারগাজর চিড়িয়াখানায় রয়েছে হাতিটি। ১৯৮৫ সালে কাবন শ্রীলঙ্কা সরকারের তরফ থেকে পাকিস্তানের জন্য উপহার হিসেবে এসেছিল। সেই উপহার তিন দশকের বেশি সময় কাটিয়ে দিয়েছে অত্যন্ত অযত্ন আর অবহেলায়। ২০১২ সালে মারা যায় কাবনের সঙ্গী সাহেলি।

ইসলামাবাদের মারগাজর চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের যথাযথ যত্ন করা হতো না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিগত কয়েক বছরে এই চিড়িয়াখানা থেকে পাঁচ শতাধিক প্রাণী নিখোঁজ হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত এখানকার সেবাকেন্দ্রে মৃত্যু হয়েছে দুই ডজনের বেশি প্রাণীর। যথাযথ পরিবেশের ঘাটতি এবং প্রাণীগুলোর যথাযথ যত্ন না নেওয়ায় এই চিড়িয়াখানার বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে। সর্বশেষ গত মে মাসে পাকিস্তানের উচ্চ আদালত চিড়িয়াখানাটি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

কাবন নামের হাতিটির করুণ পরিস্থিতি প্রাণী অধিকার কর্মীদের নজরে আসে চার বছর আগে। তাঁদের চার বছরের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে কাবনকে কম্বোডিয়ার কোনো একটি অভয়ারণ্যে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, বিশ্বের নিঃসঙ্গতম হাতিটি এরপর সুন্দর, স্বাভাবিক জীবন পাবে।

হাতিটিসহ মারগাজর চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলোর জন্য আন্দোলন চালানো প্রাণী কল্যাণ সংগঠন ফোর পজের মুখপাত্র মার্টিন বয়ের বলেন, কাবনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে স্থানান্তরের অনুমোদন পাওয়া গেছে। কম্বোডিয়ার অভয়ারণ্যে হাতিটি সঙ্গী খুঁজে পাবে, ভালো পরিবেশও পাবে। তিনি জানান, গত শুক্রবার তাঁরা কাবনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।

ফোর পজের প্রাণী চিকিৎসক আমির খলিল বলেন, পুষ্টিহীনতা আর কায়িক শ্রমের ঘাটতির কারণে হাতিটি স্থূলতায় ভুগছে। নড়াচড়া অনেকটাই কমে গেছে। তার নখগুলো ভেঙে গেছে, বিকৃত হয়ে গেছে।

হাতিটি পরিদর্শনের সময় ফোর পজের বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে জার্মানির লিবনিজ ইনস্টিটিউট ফর জু অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ রিসার্চের প্রধান প্রাণী চিকিৎসক ফ্রাঙ্ক গরিৎজও ছিলেন। তিনি বলেন, ছোট প্রকোষ্ঠে থাকার কারণে নড়াচড়ার সুযোগ খুব একটা ছিল না হাতিটির। এ ছাড়া দীর্ঘসময় সঙ্গীহীন থাকার কারণে তার আচরণেও পরিবর্তন এসেছে। সব মিলিয়ে হাতিটি বিষণ্ন হয়ে পড়েছে।