কাবুলে গুরুত্বপূর্ণ জিরগা সমাবেশে কোনো নারীর উপস্থিতি নেই

বোরকা পরিহিত আফগান নারীদের
ফাইল ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তানে নারীদের আরও কোণঠাসা করে ফেলল তালেবান সরকার। দেশটিতে ‘লয়াজিরগা’ নামের মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে হাজার হাজার আফগান পণ্ডিত ও উপজাতীয় প্রবীণ নেতা অংশ নিলেও সেখানে কোনো নারীকে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। আজ বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া তিন দিনের ওই গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশে তালেবান নিজেদের কট্টর ইসলামি শাসনরীতি পাস করিয়ে নিতে পারবে বলে আশা করছে।

এই জিরগা এমন এক সময় আয়োজন করা হলো, যখন শক্তিশালী ভূমিকম্পে আফগানরা খাদ্য, ওষুধসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবে ভুগছে। গত সপ্তাহে আঘাত হানা ভূমিকম্পে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। গৃহহারা হয়েছে কয়েক হাজার। যদিও ওই সমাবেশের বিষয়ে খুব বেশি বিস্তারিত জানায়নি তালেবান।

আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী ওই সমাবেশে সাধারণত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অংশ নিয়ে থাকেন। সেখানে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। এই সমাবেশে গণমাধ্যমকর্মীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

গত বছরের আগস্টে পশ্চিমা সমর্থিত সরকার হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেয় তালেবান। এর পর থেকে বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল আফগানিস্তানকে চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তালেবান সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জব্দ করা আফগানিস্তানের কিছু রিজার্ভ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে কাতারে জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতাদের সঙ্গে গতকাল বৈঠকে বসেছেন। ওয়াশিংটন ইসলামপন্থী তালেবান সরকারের পরিবর্তে সাধারণ আফগানদের সহায়তার জন্য অর্থ প্রদান নিশ্চিতের উপায় খুঁজছে।

তালেবান সরকারের একটি সূত্র চলতি সপ্তাহে এএফপিকে জানিয়েছে, জিরগায় তালেবান শাসনের সমালোচনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং মেয়েদের শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।

কিন্তু ওই সমাবেশে নারীদের উপস্থিতির অনুমতি দেওয়া হয়নি জানিয়ে আফগানিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী আবদুল সালাম হানাফি গত বুধবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আরটিএকে বলেছেন, নারীদের উপস্থিতির কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, নারীদের পুরুষ স্বজনেরা সমাবেশে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তিনি বলেন, ‘নারীরা আমাদের মা-বোন। আমরা তাঁদের সম্মান করি। তাঁদের ছেলেরা সমাবেশে উপস্থিত আছেন। এর মানে তাঁরাও এই সমাবেশে না থেকেও যুক্ত রয়েছেন।’

আফগানিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো একটি চিঠি এএফপির হাতে এসেছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, আফগানিস্তানের চার শতাধিক জেলার প্রতিটি থেকে জিরগায় অংশ নিতে তিনজন প্রতিনিধি পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আফগানিস্তানে তালেবানের প্রত্যাবর্তনের পর থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেয়েদের পড়াশোনা করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। নারীদের সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে নারীদের একা ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয় এবং সারা শরীর ঢেকে রাখার পোশাক পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দেশটিতে ধর্মীয় সংগীত ছাড়া অন্য গানবাজনা নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। বিজ্ঞাপনে মানুষের মূর্তির চিত্রায়ন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, টিভি চ্যানেলগুলোকে অনাবৃত নারীদের চলচ্চিত্র ও সোপ অপেরা দেখানো বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরার ও দাড়ি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মুখ ঢেকে সংবাদপাঠেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি।