ফ্রান্স কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে

‘পিঠে ছুরি মারার’ মতোই ফ্রান্সকে না জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সাবমেরিন নিয়ে আরেক চুক্তি সেরে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ( বা থেকে দ্বিতীয়)  ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল (মাঝে)। অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর সাবমেরিনে। ২০১৮ সালের মে মাসে, সিডনিতে।
ছবি : এএফপি

কথা দিয়ে কথা রাখেনি অস্ট্রেলিয়া। ক্ষুব্ধ ফ্রান্স। দুই দেশের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ইউরোর একটি চুক্তি ছিল। চুক্তি অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়াকে ১২টি ডিজেলচালিত ইলেকট্রিক সাবমেরিন তৈরি করে দিত ফ্রান্স। ২০১৬ সাল দুই মিত্র দেশ এ নিয়ে আলোচনা সেরেও রেখেছিল। সে অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু ঠিক ‘পিঠে ছুরি মারার’ মতোই ফ্রান্সকে না জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সাবমেরিন নিয়ে আরেক চুক্তি সেরে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক খবরে বলা হয়, গত বুধবার অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে ফ্রান্সের সঙ্গে  চুক্তি বাতিল করা হয়। এর বদলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন কেনার আগ্রহের কথা জানায়। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়েছে ফ্রান্স। তারা শুধু অস্ট্রেলিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ নয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপরেও ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কারণ, ফ্রান্সের দীর্ঘদিনের পুরোনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে ফ্রান্সের ক্ষতি করে অস্ট্রেলিয়াকে বাগিয়ে নেওয়ার ঘটনা নিশ্চয়ই বন্ধুর মতো কাজ নয়।  

আল জাজিরার খবরে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার সাবমেরিন চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পদক্ষেপ পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে একটি অভূতপূর্ব কূটনৈতিক লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে দেশ দুটির বিরুদ্ধে ‘দ্বৈততা, ঘৃণা ও মিথ্যাচার’ করার অভিযোগ এনেছে। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তার সাবমেরিন বিক্রির চুক্তি বাতিলে শতকোটি ইউরো অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে ফ্রান্স।

ভার্জিনিয়া ক্লাস সাবমেরিন
ছবি : রয়টার্স

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এ নিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ফোন করবেন। গতকাল রোববার ফ্রান্স সরকারের তরফে এ তথ্য জানানো হয়। বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে ফোনালাপের কথা বলা হয়েছে।

যেকোনো অজুহাতে আমাদের অঞ্চলের দেশগুলোতে বাহ্যিক শক্তির হস্তক্ষেপকে প্রতিরোধ করুন এবং আপনার দেশের উন্নয়ন ও উন্নতির ভবিষ্যৎকে নিজের হাতে ধরে রাখুন
সি চিন পিং, চীনের প্রেসিডেন্ট

এদিকে পারমাণবিক সাবমেরিন বিক্রির চুক্তিকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি মিথ্যা বলার অভিযোগ তুলেছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভেস লে ড্রিয়ান।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ
ছবি : এএফপি

বিবিসি জানায়, এ চুক্তির প্রতিবাদে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার দেশ দুটিতে নিযুক্ত নিজেদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠিয়েছিল ফ্রান্স। গত শনিবার টেলিভিশন চ্যানেল ফ্রান্স-২-এর সঙ্গে এক আলাপচারিতায় এ অভিযোগ আনেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই নিরাপত্তা চুক্তির মাধ্যমে দেশ দুটি ফ্রান্সের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও অপমানজনক আচরণ করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

নতুন এই চুক্তি মিত্রদেশগুলোর সম্পর্কের মধ্যে ‘মারাত্মক সংকট’ সৃষ্টি করেছে বলে উল্লেখ করেন জ্যঁ-ইভেস লে ড্রিয়ান। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, ও ফ্রান্সের সম্পর্কের ইতিহাসে এই প্রথম আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে আনলাম। এটি একটি গুরুতর রাজনৈতিক পদক্ষেপ। দুই দেশের সম্পর্কে সংকট কতটা, তা এ থেকে বোঝা যাচ্ছে।’

অসন্তুষ্ট ফ্রান্স

ফ্রান্স বলেছে, অস্ট্রেলিয়া এবং তার অংশীদারেরা যেভাবে বিষয়টি ঘটিয়েছে, তাতে ফ্রান্স অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। বর্তমান পরিস্থিতির পুনর্মূল্যায়ন করতেই তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

দুই সপ্তাহ আগেও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছিলেন, তাঁরা ফ্রান্সের কাছ থেকেই এই সাবমেরিন তৈরি করে নেবেন। কিন্তু দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।

২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ফ্রান্সের নৌযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নেভাল গ্রুপের কাছ থেকে তারা নতুন সাবমেরিন তৈরি করে নেবে। নতুন এই সাবমেরিন প্রতিস্থাপিত হবে পুরোনো কলিন্স সাবমেরিনের জায়গায়। গত জুনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন যখন ফ্রান্সে গিয়েছিলেন, তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার কথা বলেছিলেন।

প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

দুই সপ্তাহ আগেও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছিলেন, তাঁরা ফ্রান্সের কাছ থেকেই এই সাবমেরিন তৈরি করে নেবেন। কিন্তু দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।

রোববার মরিসন বলেন, ফ্রান্সের গুরুতর উদ্বেগ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া ওয়াকিবহাল। কিন্তু তারা যে সাবমেরিন বহর তৈরি করবে, তা অস্ট্রেলিয়ার চাহিদা পূরণ করবে না।

আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা নিয়ে উদ্বেগে চীন

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ত্রিদেশীয় নতুন জোট ও চুক্তি ঘিরে চীনও উদ্বেগে রয়েছে। আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে চীনের। এর ওপর নতুন করে সাবমেরিন চুক্তি ঘিরে চীন এখন নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এইউকেইউএস নামের এ চুক্তির অধীনে অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিনের প্রযুক্তি সরবরাহ করবে ওই দুই দেশ। এ নিয়ে প্রতিবেশীদের বিদেশি হস্তক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করছে চীন। এ পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়া বলছে, নিজের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করা তাদের অধিকার।

চুক্তিটি চীনকে প্রতিপক্ষ করার উদ্দেশ্যে করা হয়নি
বরিস জনসন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন সক্ষমতা অর্জনে চীনের ক্ষুব্ধ হওয়ার বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। মরিসন চীনের সাবমেরিন সক্ষমতার দিকে ইঙ্গিত করে আকাশ ও জলসীমায় আইনের শাসন রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গত শুক্রবার সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিইও) সম্মেলনে সি চিন পিং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর প্রধানদের উদ্দেশে বলেন, ‘যেকোনো অজুহাতে আমাদের অঞ্চলের দেশগুলোতে বাহ্যিক শক্তির হস্তক্ষেপকে প্রতিরোধ করুন এবং আপনার দেশের উন্নয়ন ও উন্নতির ভবিষ্যৎকে নিজের হাতে ধরে রাখুন।’

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা অংশীদারত্বের ঘোষণা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন কেনার ঘোষণার পর চীনের প্রেসিডেন্ট এমন মন্তব্য করলেন। এর আগে বিরুদ্ধ জোট গঠনের নিন্দা জানিয়ে চীন বলেছে, এই তিন দেশের জোট ‘অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘ছোট মানসিকতার।’ এটা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন হুমকি।

স্কট মরিসন
ছবি: সংগৃহীত

চীনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স ইউনিভার্সিটির সামরিক বিশেষজ্ঞ লি হাইদং বলেছেন, স্নায়ুযুদ্ধের সময় ইউরোপে রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে যে পদ্ধতি নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, এবার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনকে দমন করতে ঠিক একই কৌশল নেওয়া হয়েছে। এটি শীতল যুদ্ধেরই মানসিকতা।

অস্ট্রেলিয়াকে এটি ভবিষ্যতে নিরাপদ রাখবে
স্কট মরিসন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

চীনের রাষ্ট্রীয় প্রকাশনা গ্লোবাল টাইমস অস্ট্রেলিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ঘুঁটি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এর মধ্যে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া বিচার–বিবেচনাহীনভাবে আমেরিকার স্নায়ুযুদ্ধের বাজিতে অর্থ জোগানোর পথ বেছে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে গ্লোবাল টাইমস। এ ছাড়া এই অঞ্চলে সামরিক শোডাউন হলে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবশ্য বলেছেন, চুক্তিটি চীনকে প্রতিপক্ষ করার উদ্দেশ্যে করা হয়নি। তবে বরিস জনসনের এ উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এ চুক্তি যুক্তরাজ্যকে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে টেনে নিতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ ছাড়া তাইওয়ানে চীনের আগ্রাসনের ঘটনায় এ জোটের প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ চুক্তি নিয়ে ফ্রান্সকে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ওয়াশিংটন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে প্যারিসের সঙ্গে কাজ করে যাবে।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, চীনের নিজস্ব পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরির কর্মসূচি চালু রয়েছে। রেডিও স্টেশন টুজিবিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মরিসন বলেছেন, প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য তাদের জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে এবং অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার মতো অন্য দেশেরও সেই অধিকার আছে।

চিরস্থায়ী অংশীদারত্ব

অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এ চুক্তির মূলে রয়েছে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের উত্থান। হেগের পারমানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন আদালতের ২০১৬ সালের সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করে দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের দাবি করেছে চীন। তারা দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করছে। এ ছাড়া স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জে ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করার অভিযোগও রয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। তবে তারা দক্ষিণ চীন সাগরে ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান ও ভিয়েতনামের প্রতিযোগিতার দাবিকে অস্বীকার করেছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার কিছু পণ্যে ব্যাপক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন।

চীনবিরোধী চুক্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ছবি : রয়টার্স

এদিকে তিন দেশের প্রতিরক্ষা জোটকে স্থায়ী বলে বর্ণনা করেছেন মরিসন। ১৮ মাস আলোচনার পর এটি তৈরি করা হয়েছে। মরিসন বলেছেন, এতে কেবল আজকের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি নয়, বরং স্থায়ী প্রতিশ্রুতির কথা রয়েছে। এ জন্যই একে চিরস্থায়ী অংশীদারত্ব বলা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াকে এটি ভবিষ্যতে নিরাপদ রাখবে।

মরিসন বলেন, অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়বে। নতুন জোটকে সাইবার নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ও সমুদ্রের নিচের সক্ষমতার ওপর বিনিয়োগ করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে মরিসন বলেন, তাঁদের চুক্তিটি জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, ফিজি ও পাপুয়া নিউগিনি ভালোভাবে গ্রহণ করেছে।

সতর্ক ইন্দোনেশিয়া

ইন্দোনেশিয়া সরকার বলেছে, তারা চুক্তিটিকে সতর্কতার সঙ্গে দেখছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইন্দোনেশিয়া এই অঞ্চলে অব্যাহত অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং ক্ষমতা প্রদর্শন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

নিউজিল্যান্ডও সতর্ক

অস্ট্রেলিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঘিরে সতর্ক রয়েছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেন, তাঁর দেশের জলসীমায় পারমাণবিক শক্তিচালিত নৌযান চলাচলের ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা বহাল থাকবে। এ কারণে প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়া যে নতুন সাবমেরিন তৈরি করতে যাচ্ছে, তা দেশটির জলসীমায় ঢুকতে পারবে না।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন
ছবি : রয়টার্স

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরির ঘোষণা দেওয়ার পর এসব কথা বলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন, অস্ট্রেলিয়ার পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরির বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।

বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স ও আল জাজিরা অবলম্বনে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন মিন্টু হোসেন।