খালি হাতে চলছে উদ্ধার, ত্রাণের জন্য হাহাকার

শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ঘরবাড়ি। তালেবান সদস্য ও গ্রামবাসী মিলে খালি হাতে সেখানে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের বারনাল জেলায়।
ছবি: এএফপি

আফগানিস্তানের পাততিকা প্রদেশের রাজধানী শারানে একটি হাসপাতালের বিছানায় গতকাল বৃহস্পতিবার শুয়ে কাঁদছিলেন বিবি হাওয়া। ভূমিকম্পে পরিবারের ১২ সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি। ডুকরে কেঁদে বলে উঠলেন, ‘আমি কোথায় যাব? আমি কোথায় যাব?’ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অনেকের অবস্থা এখন বিবি হাওয়ার মতো। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকে খালি আকাশের নিচে বসবাস করছেন। খবর আল জাজিরার

গত আগস্টে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান। পাকতিকা প্রদেশে ৫ দশমিক ৯ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো আঘাত হেনেছে। খাবারের জন্য মানুষের হাহাকার। বিদেশি সহায়তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে মানুষ। তালেবান সরকারও দেশের এই কঠিন সময়ে সহায়তায় এগিয়ে আসতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

কাবুল থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পাকতিকা অঞ্চলে গত বুধবার ভোরে ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে অন্তত ১ হাজার লোক নিহত হন। অনেক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সেখানকার লোকজন খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে চাপা পড়া লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আফগানিস্তানে গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ জন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে চাপা পড়ে থাকতে পারে।

আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক বাড়িঘর ও স্থাপনা। বুধবার পাকতিকা প্রদেশের গায়ান জেলার একটি গ্রামে।
ছবি: এএফপি

আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শারাফাত জামান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, গতকাল সকাল পর্যন্ত এক হাজারের বেশি লোকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিছু এলাকায় সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। তবে আমাদের আরও সাহায্য দরকার।

সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট ভূমিধস ও ভূমিকম্পে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পূর্বের খোস্ত ও পাকতিকা প্রদেশে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাকতিকার গায়ান জেলার লোকজন এক হাঁটু কাদার মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দা আতিকুল্লাহ ব্রাহাম বলেন, গায়ানের ৩০টি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি কয়েকটি পরিবারকে দেখেছি যাদের শিশু বা বয়স্ক ছাড়া কেউ বেঁচে নেই। ছয়-সাতটি পরিবারের সব সদস্যই মারা গেছে।

ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া হাকিমুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘পুরো দেশকে আমাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের কিছুই নেই। এমনকি মাথা গোঁজার জন্য তাঁবুও নেই।

আরও পড়ুন

গত বছর তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর অধিকাংশ সাহায্যকারী সংস্থা দেশটি ছেড়ে চলে গেছে। অনেক দেশ আফগানিস্তানের ব্যাংকিং খাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং সাহায্য বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তালেবানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল কাহার বালখি বলেন, অনেক গ্রাম মাটির সঙ্গে পুরোপুরি মিশে গেছে। সরকার জনগণকে যতটা প্রয়োজন আর্থিকভাবে ততটা সহায়তা করতে পারছে না। ত্রাণ সংস্থাগুলো, প্রতিবেশী দেশ ও বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো সহায়তা করছে। তবে সহায়তার পরিমাণ আরও বাড়ানো দরকার। কারণ, গত দুই দশকে এমন ভয়ংকর ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা হয়নি।

তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ টুইটারে লিখেছেন, পাকিস্তান থেকে আট ট্রাক খাবার ও অন্যান্য সাহায্য পাকতিকায় পৌঁছেছে। ইরান থেকে দুটি উড়োজাহাজে করে মানবিক সাহায্য ও কাতার থেকে সাহায্য এসেছে।

আফগানিস্তানে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের (এনআরসি) কান্ট্রি ডিরেক্টর নেইল টার্নার বলেন, তালেবান কর্তৃপক্ষ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে পরিপূর্ণ কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে। তবে আফগানিস্তানে জাতিসংঘের ডেপুটি বিশেষ প্রতিনিধি রামিজ আলাকবারভ বলেন, তালেবানের কাছ থেকে উদ্ধার অভিযানের জন্য আনুষ্ঠানিক সাহায্য চাওয়া হয়নি। অনেক আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে তালেবানের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন।

আফগানিস্তানের পাততিকা প্রদেশে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত একটি বাড়ি
ছবি: এএফপি

তবে আল-জাজিরা বলছে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ অন্যান্য সংস্থার সাহায্যকারী ট্রাক ওই এলাকায় যেতে চাইলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেখানে যেতে পারেনি।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়। ওয়াশিংটন বলেছে, তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনার মাধ্যমে সাহায্য করার উপায় খুঁজবে তারা। জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক জেক সুলিভান বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘটনার দিকে নজর রাখছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি ও সরকারের অন্য সহযোগীদের সাহায্য করার জন্য বলেছেন।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে জাপান সরকার। গতকাল জাপান সরকারের মুখপাত্র এ কথা বলেছেন। চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আরও পড়ুন