খাসোগি হত্যা নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদন নাকচ সৌদির

খাসোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে
এএফপি ফাইল ছবি

সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র যে গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা ‘পুরোপুরি নাকচ’ করে দিয়েছে সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর গতকাল শুক্রবার সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করে।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, সৌদি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনে সৌদি আরবের নেতৃত্ব সম্পর্কিত নেতিবাচক, মিথ্যা ও অগ্রহণযোগ্য মূল্যায়ন সৌদি সরকার পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং প্রতিবেদনটি ভুল তথ্য ও সিদ্ধান্তে ভরা।’

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার বাইডেন প্রশাসন খাসোগি হত্যার শ্রেণিবদ্ধ গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের কার্যালয় (ওডিএনআই) বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ওই প্রতিবেদন তৈরি করে। সেখানে বলা হয়, খাসোগি হত্যার বিষয়টি যুবরাজ বিন সালমান জানতেন এবং সরাসরি অনুমোদন দিয়েছিলেন।

এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গোয়েন্দা তথ্য পেলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৭৬ সৌদি নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের ‘হয়রানি’ করায় তাঁদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানাননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।

খাসোগি হত্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় সাবেক ডেপুটি গোয়েন্দা প্রধান ও সৌদি রয়্যাল গার্ডসের র‌্যাপিড ইন্টারভেনশন ফোর্সের নাম রয়েছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক খাসোগি তাঁর তুর্কি বাগদত্তা হাতিজে জেঙ্গিসকে নিয়ে বিয়ের কাগজপত্র আনতে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে যান। এ সময় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় তাঁকে। পরে তাঁর লাশ টুকরা টুকরা করে গুম করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। এতে ভাবমূর্তির সংকটে পড়েন সৌদি আরব ও দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। প্রথমে ওই হত্যাকাণ্ডে সৌদি নাগরিকদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে দেশটির সরকার। পরে জানায়, সৌদি আরবের কিছু দুষ্কৃতকারীর অভিযানে সাংবাদিক খাসোগি প্রাণ হারান। তবে যুবরাজ বিন সালমান ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে আরও বলেছে, ‘সৌদি আরব এই জঘন্য অপরাধের স্পষ্ট ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে এবং এই রকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেই জন্য সৌদি আরবের নেতৃত্ব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এরপরও অযৌক্তিক ও ভুলে ভরা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’ মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, নিজেদের নেতৃত্ব, সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থাকে হেয় করে এমন যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নাকচ করছে সৌদি আরব।’

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক সুদৃঢ় ও স্থায়ী অংশীদারত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। আমরা সেই সুদৃঢ় সম্পর্কের ভিত্তি রক্ষার প্রত্যাশা করি।’

আরও পড়ুন