চীনে অস্ট্রেলীয় নারী সাংবাদিক আটক

চীন ও অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে কিছুদিন থেকেই।
ছবি: রয়টার্স

জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকির অভিযোগ তুলে অস্ট্রেলিয়ার এক নারী সাংবাদিককে কয়েক সপ্তাহ ধরে চীনে আটকে রাখা হয়েছে। ওই সাংবাদিক হলেন চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের (সিজিটিএন) সংবাদ উপস্থাপক চেং লি। চীনের জাতীয় স্বার্থ নষ্ট করে—এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ১৪ আগস্ট থেকে তাঁকে আটক রাখা হয়েছে।

এএফপির খবরে জানানো হয়, চীনে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমের জন্য কাজ করেন—এমন দুই সাংবাদিক সিডনিতে ফিরে যাওয়ার পরই এ ঘোষণা এল। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার সিডনিতে পৌঁছান দুই সংবাদকর্মী দ্য অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (এবিসি) বিল বার্টেলস ও দ্য অস্ট্রেলিয়ান ফিন্যান্সিয়াল রিভিউসের (এএফআর) মাইক স্মিথ।

চীন ছাড়ার আগে দেশটির কর্তৃপক্ষ দুই সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বার্টেলস বিবিসিকে জানান, চেংয়ের বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

অতীতেও অস্ট্রেলীয় সমাজে চীনের হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তবে ক্যানবেরা করোনার প্রাদুর্ভাবের উৎস নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত সমর্থন করায় দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি হয়। চীনের দ্য ফরেন করেসপনডেন্টস ক্লাব গত সোমবার বলেছে, ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশটি থেকে ১৭ জন বিদেশি সাংবাদিককে বহিষ্কার করা হয়েছে।

চেং লির সঙ্গে কী ঘটেছে

ইংলিশ চ্যানেল সিজিটিএনের বাণিজ্যবিষয়ক সাংবাদিক চেং লি। তিনি অস্ট্রেলীয় নাগরিক। হঠাৎ করেই গত আগস্ট মাস থেকে চেং লির সঙ্গে সিজিটিএন চ্যানেলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। চীন ঘোষণা দেয়, অজ্ঞাত একটা জায়গায় তাঁকে আবাসিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

সে সময় চেং লির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের কথা বলা হয়নি। পরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজান বলেন, সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে সাংবাদিক চেং লিকে আটক করা হয়েছে। ঝাও লিজান আরও বলেন, সরকার তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি। মুখপাত্র ঝাও লিজান অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে চেং লির বিরুদ্ধে কী ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, তা জানা যায়নি।

অনেকে মনে করছেন, অস্ট্রেলীয় নাগরিকত্ব এবং বেইজিং ও ক্যানবেরার মধ্যে সম্পর্কের অবনতির কারণে চেং লিকে আটক করা হয়েছে।

অস্ট্রেলীয় অন্য সাংবাদিকেরা কেমন আছেন?

চীন সরকারের জিজ্ঞাসাবাদের পর মাইক স্মিথ ও বিল বার্টেলস স্থানীয় সময় গত সোমবার চীন ছেড়ে যান। বার্টেলস বিবিসিকে জানান, সোমবার অস্ট্রেলীয় কূটনীতিকেরা তাঁকে অবিলম্বে চীন ছেড়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, কূটনীতিকদের কাছে সতর্কতামূলক কোনো বার্তা ছিল। কিন্তু সেটি কী, তা তাঁরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেননি।

গত বুধবার মধ্যরাতে বার্টেলসের বাসায় চীনের ছয় পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন অনুবাদক যান। পরের দিন বৃহস্পতিবার তিনি বেইজিং ছেড়ে যাওয়ার জন্য ফ্লাইটের টিকিট বুক করেছিলেন। বার্টেলস বলেন, পুলিশ তাঁকে আটক করেনি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক তদন্তের জন্য তিনি দেশ ছেড়ে যেতে পারবেন না।

পরের দিন বার্টেলস অস্ট্রেলীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। সেখানেই তিনি চার দিন ছিলেন। পরে অস্ট্রেলীয় রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে চীনের পুলিশ চেং লির বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। মাইক স্মিথকেও একই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।