ছেলের কাণ্ডে বিপাকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সুগা

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী  ইয়োশিহিদে সুগা
ছবি: এএফপি

জাপানে করোনাভাইরাস টিকা কর্মসূচি, অর্থনীতির নাজুক অবস্থাসহ নানা বিষয়ে বিব্রতকর অবস্থায় আছে প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগার সরকার। এসবের বাইরে নিজের পরিবারের সদস্যদের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ হওয়ায় নতুন করে সমস্যায় পড়েছেন সুগা।

নতুন এ সমস্যার মূলে আছেন সুগার বড় ছেলে সেইগো সুগা। তিনি টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাতা ও উপগ্রহ সম্প্রচার চালানো একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। এসব কোম্পানির লাইসেন্স সাধারণত জাপানের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়।
সেইগো সুগার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে মন্ত্রণালয়ের চারজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে টোকিওর একটি রেস্তোরাঁয় পানাহার করেছেন। জাপানে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যবসাসংক্রান্ত স্বার্থ জড়িত থাকা বেসরকারি খাতের কোনো কোম্পানির নির্বাহীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখাকে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য যা সদাচরণবহির্ভূত।

জাপানের সাপ্তাহিক সাময়িকী ‘শুকান বুনশুনে’র অনলাইন সংস্করণ ফেব্রুয়ারির শুরুতে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর বিষয়টি নিয়ে জাপানের সংসদে প্রধানমন্ত্রী সুগাকে জবাবদিহি করতে হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে জাপানের অন্যান্য সংবাদমাধ্যমও বিষয়টি নিয়ে উঠেপড়ে লাগে। পরে জানা যায়, চারজন নয়, জাপানের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অন্তত ১৩ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে পানাহারে অংশ নিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, সেইগো সুগা ওই সরকারি কর্মকর্তাদের উপহার এবং ট্যাক্সি ভাড়ার ভাউচারও দিয়েছিলেন।

বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বা তাঁর কোম্পানি ওই সব সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে কী সুবিধা নিয়েছেন, জাপানের সংবাদমাধ্যমগুলো এখন এর খোঁজ করছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এমন অপরাধের জন্য শাস্তি পেতে হয়েছে। ১৩ কর্মকর্তার সবাইকেই নৈতিকতা বিধি লঙ্ঘনের জন্য তিরস্কার করা ছাড়াও তাঁদের বেতন কাটা হয়েছে। এ ছাড়া শুরুতে যে চারজনের নাম এসেছিল, তাঁদের ইতিমধ্যে পদাবনতি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা মোট ৩৯ বার সুগার পুত্রের আপ্যায়নে অংশ নিয়েছেন।

জাপানের সংসদে নিয়মিত প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী সুগাকে ছেলের আচরণের জন্য বিরোধী দলের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হচ্ছে। সুগা অবশ্য সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁর ছেলের এ ঘটনায় তিনি সত্যিকার অর্থে দুঃখিত এবং জাপানের জনগণের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। শুরুতে অবশ্য তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিলেন, তাঁর ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক। ছেলে কী করছে না করছে তার ওপর বাবার কোনো হাত নেই।

মন্ত্রণালয়ের অভিযুক্ত ১৩ কর্মকর্তার একজন হচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের সাবেক নীতি সমন্বয়বিষয়ক সচিব ও বর্তমানে মন্ত্রিসভার জনসংযোগ সচিবের দায়িত্বে নিয়োজিত মাকিকো ইয়ামাদা। সেইগো সুগা যে পানাহারে তাঁকে আপ্যায়িত করেছেন সেখানে কেবল একজনের নৈশভোজের বিল ছিল ৭৪ হাজার ইয়েন বা প্রায় ৭০০ মার্কিন ডলার। জাপানের মন্ত্রিসভার চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি কাৎসুনোবু কাতো চলতি সপ্তাহের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে ইয়ামাদাকে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং ইয়ামাদা নিজে স্বেচ্ছায় আপ্যায়নের পুরো অর্থ জমা দেওয়া ছাড়াও নিজের এক মাসের বেতন থেকে ৬০ শতাংশ ফিরিয়ে দিয়েছেন।

সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দলের সাংসদেরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এত বিশাল অঙ্কের মূল্য পরিশোধ করে তাঁর ছেলে আমন্ত্রিতদের কী খেতে দিয়েছিলেন, তা তাঁরা জানতে চান। প্রধানমন্ত্রী নিজে সেই প্রশ্নের উত্তর না দিলেও চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি পরে রাতের পানাহারের মেনুর একটি তালিকার বর্ণনা দেন।